একটু একটু করে এগিয়ে আসছে পুজোর দিন। করোনা-পরিস্থিতিতেও মানুষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন শহর পরিক্রমার। প্যান্ডেল-হপিং ছাড়া দুর্গাপুজো হয় নাকি? আর দর্শকদের জন্য একটু একটু অরে সেজে উঠছে শহরের মণ্ডপগুলিও। শিল্পীরা পরম যত্নে সাজিয়ে তুলছেন প্রতিটা মণ্ডপ। কেমন চলছে সেইসব কাজ? সেই খবর জানতেই আমরা যোগাযোগ করেছিলাম শিল্পী পার্থ দাশগুপ্তর সঙ্গে। ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি জানালেন কাজের অভিজ্ঞতা।
কলকাতার দুর্গাপুজোর মণ্ডপে সমসময়ের প্রতিফলন নতুন কোনো ঘটনা নয়। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই থিম-পুজোর চল শুরু হয়ে গিয়েছে। আর বর্তমান পরিস্থিতির প্রভাব যে মণ্ডপসজ্জায় পড়বে, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। পার্থ দাশগুপ্তের কথায়, “মানুষ যে একটা অভূতপূর্ব ঘটনার সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন, তাঁদের জীবন তুলে ধরতে না পারলে ইতিহাসের সঙ্গে অবিচার করা হবে।” তবে শুধুই মণ্ডপের বিষয়বস্তুতেই নয়, গঠনকাঠামোতেও ছাপ ফেলতে চলেছে মহামারী পরিস্থিতি।
করোনার কারণে পুজোশিল্পীদের বছরের এই একটি কাজের ভবিষ্যতও দীর্ঘদিন অনিশ্চিত অন্ধকারের মধ্যেই ছিল। তবে শিল্পী পার্থ দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, “আমরা প্রায় কেউই শুধু মণ্ডপের কাজের উপর নির্ভর করে থাকি না। সারা বছর অন্য নানা শিল্পের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকি। কিন্তু দুর্গাপুজো একটা বড়ো কাজের জায়গা। সেটাকে জীবিকার সূত্র হিসাবে দেখি না। কিন্তু কাজের সুযোগ না থাকলে খুবই খারাপ লাগত।” তবে এবছর দুর্গাপুজো হবে কিনা, এই প্রশ্ন দীর্ঘদিন অনিশ্চিত অন্ধকারের মধ্যে ঢাকা ছিল। অবশেষে পুজোর ছাড়পত্র মিললেও নানা ধরনের প্রতিকূলতার মুখেই পড়তে হয়েছে শিল্পীদের। সেইসব অভিজ্ঞতার কথাও জানালেন পার্থ দাশগুপ্ত।
“এবছর কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে সময় নিয়ে।” বলছিলেন তিনি। অন্যান্য বছর যেখানে প্রায় ৫-৬ মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে, এবছর সেখানে মাত্র মাসখানেকের কিছু বেশি সময় পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এই প্রতিকূলতাকেও ছাপিয়ে ওঠার রাস্তা বেছে নিয়েছেন শিল্পীরা। পার্থ দাশগুপ্ত জানালেন সেই পরিকল্পনা। “ধরা যাক ২০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে মণ্ডপ গড়ে তুলতে হবে। অন্যান্য সময় ছোটো ছোটো কাঠামো তৈরি করে মণ্ডপ গড়ে তোলা হয়। সূক্ষ্ম তুলির টানে একটু একটু করে রং করা হয়। কিন্তু সময় কম থাকায় এবছর বেছে নিয়েছি কিছু বড়ো বড়ো কাঠামো। কাজ চলছে মোটা তুলি দিয়ে।” এর ফলে যে মণ্ডপের গঠনকাঠামোতেও বেশ বড়োসড়ো পরিবর্তন আসতে চলেছে, সেকথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু দর্শকদের মন জয় করতে পারবেন বলেই আশাবাদী শিল্পী।
আরও পড়ুন
কাজের বরাত সামান্যই, পুজোর মুখে ধুঁকছে বাংলার ‘শোলাশিল্প গ্রাম’ বনকাপাশি
পাশাপাশি কর্মীরা যদি কাজ করতে গিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হন, তাই তাঁদের জন্য হেল্থ ইন্সিওরেন্সের ব্যবস্থাও করেছেন শিল্পী। যতটা সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে প্রস্তুতি। কমিয়ে আনা হয়েছে দৈনিক কাজের সময়ও। সকাল ৯.৩০-এ কাজ শুরু করে বিকেল ৫.৩০-এর মধ্যেই কাজ গুটিয়ে ফেলা হয়। এতে কাজ ধীরে এগোলেও কর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এই উদ্যোগ আবশ্যিক। এমনই নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই এগিয়ে চলেছে পুজোর প্রস্তুতি। একটু একটু করে সেজে উঠছে ঠাকুরপুকুর স্টেটব্যাঙ্ক পার্ক সার্বজনীন দুর্গাপুজোর মাঠ।
আরও পড়ুন
বেলুড় মঠে এবার ভক্তদের প্রবেশ নিষেধ, অনলাইনেই দেখতে হবে পুজো
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
এগিয়ে আসছে পুজো, করোনাকালে কেমন আছেন কুমোরটুলির ‘বিশ্বকর্মা’র সন্তানরা?