একদিকে দুয়ারে কড়া নাড়ছে করোনা অতিমারীর তৃতীয় তরঙ্গ। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে ভারত অতিমারীর প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। তবুও বন্ধ হয়নি মৃত্যুমিছিল। গত দেড় বছরের বেশি সময়ে বহু শিল্পী এবং কিংবদন্তীর মৃত্যুর সাক্ষী থেকেছি আমরা। সেই সরণি বেয়েই এবার প্রয়াত হলেন তবলিয়া পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দুপুরে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ভারতের অন্যতম প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রগুলির একটি তবলা। অথচ দীর্ঘদিন কেবল সঙ্গীতের পার্শ্ববর্তী হয়েই থেকেছে এই বাজনাটি। তবলাকে তার নিজস্ব ঐশ্বর্যে পৌঁছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে কয়েকজন শিল্পী কাজ করেছেন, শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে অন্যতম। কোনো খ্যাতনামা শিল্পী পরিবারে জন্ম হয়নি তাঁর। তবু ছোট থেকেই ভালোবেসে ফেলেছিলেন তবলাকে। মাত্র ৬ বছর বয়সে হাতেখড়ি। তারপর একটু একটু করে অনুশীলনের মাধ্যমে মেলে ধরেছেন নিজেকে। মঞ্চ ভাগ করে নিয়েছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া, উস্তাদ রশিদ খাঁয়ের মতো শিল্পীদের সঙ্গে। এছাড়াও ডোভারলেন সঙ্গীতসম্মেলনের মতো মঞ্চে একক আসরেও তবলা শুনিয়েছেন তিনি। মুগ্ধ করেছেন শ্রোতাদের।
সারাজীবন সঙ্গীতের জন্যই নিবেদিত ছিলেন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তৈরি করেছিলেন নিজস্ব একটি স্কুলও। সবসময় চাইতেন তাঁর শিক্ষার্থীরা তাঁকেও ছাপিয়ে যান। প্রত্যেকের তালের মধ্যে নিজস্বতা গড়ে উঠুক। কিন্তু করোনা ভাইরাস সেই সব প্রচেষ্টায় ইতিরেখা টেনে দিল। ২০ জুন থেকেই কোভিডের সঙ্গে লড়ছিলেন পণ্ডিত শুভঙ্কর। ইতিমধ্যে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভ্যাকসিনও বাঁচাতে পারেনি তাঁকে। হাসপাতালে ভর্তির পর প্রথমে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও ক্রমশ আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। গত একমাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন চিকিৎসকরা। অবশেষে সব চেষ্টার ইতি ঘটল। পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে শেষ হল একটি সুরেলা অধ্যায়ের। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সঙ্গীতসমাজ।
Powered by Froala Editor