‘আই কান্ট ব্রিথ!’— এই কথাটাই বারবার বলছিল লোকটা। আর ছটফট করছিল। উঠে দাঁড়াতেও পারছিল না। কী করে পারবে? তাঁর গলা হাঁটু দিয়ে চেপে রেখেছে এক পুলিশ। বারবার বলা সত্ত্বেও পুলিশটি কিছুতেই ওই লোকটাকে মুক্তি দিচ্ছিল না। একসময় ঘনিয়ে এল অন্ধকার। লোকটার ক্ষীণ আওয়াজ আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল। এই গোটা ঘটনাটা পুলিশি অত্যাচার ও নৃশংসতার নির্মম উদাহরণ হয়েই থেকে যেত; কিন্তু আসল ব্যাপার তাঁর থেকেও গভীর। কারণ, যে লোকটি মারা গেলেন, তাঁর গায়ের রং ছিল কালো; পুলিশটি ফর্সা। আর দেশটির নাম আমেরিকা!
ঘটনার সূত্রপাত সোমবারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনিপোলিসের একটি রেস্তোরাঁর নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করছিলেন বছর ছেচল্লিশের জর্জ ফ্লয়েড। এমন সময় সেখানে হাজির হয় পুলিশের একটি গাড়ি। জর্জের বিরুদ্ধে নাকি প্রতারণার অভিযোগ ছিল। সেটা সত্যি কিনা, জানা যায়নি। হঠাৎই জর্জকে মাটিতে ফেলে দেন এক পুলিশকর্মী। হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেন গলা। এদিকে জর্জ নিরস্ত্র, তিনি কী করেছেন কিচ্ছু বুঝতে পারছেন না। শ্বাস নিতে পারছেন না; ক্রমাগত বলেও যাচ্ছেন। কিন্তু পুলিশটি নাছোড়বান্দা। যখন হাঁটু ওঠাল, ততক্ষণে সব শেষ। আর এই ঘটনারই একটি ভিডিও ক্লিপিংস ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানেই ধরা পড়েছে এমন ভয়াবহ দৃশ্য…
এই ঘটনা আবারও মার্কিন প্রদেশে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার ঘটনা সামনে নিয়ে এল। শত আইন এলেও, আজও দেশের একাংশ যে কালো চামড়ার মানুষদের অবহেলাই করে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ দিল। যদিও ডেরেক চৌভিন নামের ওই পুলিশ অফিসার-সহ আরও তিনজনকে সাসপেন্ড করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর এসবের মধ্যেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।
এমনিতেই আমেরিকায় বিধ্বংসী আকার নিয়েছে করোনা ভাইরাস। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে এমনিতেই অসন্তুষ্ট অনেকে। তার ওপর এমন ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁরা। মিনিপোলিস তো বটেই, নিউ ইয়র্ক, ডেট্রয়েট-সহ নানা জায়গায় চলছে অবস্থান বিক্ষোভ। হোয়াইট হাউজের সামনে জমায়েত শুরু করেছেন মানুষরা। রীতিমতো আগুন জ্বলছে মিনিপোলিসে। এরই মধ্যে সেখানে জারি হয়েছে কার্ফু। সবার মুখে মুখে উঠে এসেছে একটাই বাক্য ‘আই কান্ট ব্রিথ’। এভাবেই কি আমাদের কণ্ঠস্বরগুলো চেপে দেওয়া হবে? আমেরিকার মতো প্রথম বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশে আজও বসে থাকবে বর্ণবিদ্বেষের ফলা? প্রশ্ন তুলছে সবাই। প্রশ্ন তুলছে মানুষ।
ছবি- সিবিএস নিউজ ৮
Powered by Froala Editor