ফ্লয়েডের মৃত্যু মিলিয়ে দিল পুলিশ ও প্রতিবাদী, জড়িয়ে ধরলেন একে অপরকে

একটা মৃত্যু, বলা ভালো একটা নিষ্ঠুর হত্যা; হঠাৎ সামনে নিয়ে এলো এক নির্লজ্জ বাস্তবতাকে। এই একুশ শতকের তৃতীয় দশকে এসেও হিংসা আর বিদ্বেষ কীভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে আমাদের পৃথিবীকে, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল। কিন্তু এই হিংসাই কি একমাত্র বাস্তব? মানবিকতা আর সৌভ্রাতৃত্ব যে আজও বিদায় নেয়নি, ফ্লয়েডের মৃত্যু পরবর্তী ঘটনা তারই সাক্ষী। একটি হত্যাকে ঘিরে যখন মামলা চলছে আদালত কক্ষে, তখন আদালতের বাইরে নতুন করে লেখা হচ্ছে মানবিকতার রূপকথা। সারা বিশ্বের সাদা মানুষরা জড়িয়ে ধরছেন কালো মানুষদের। হিংসা নয়, নিরাপত্তার আশ্বাস প্রত্যেকের উষ্ণ হৃদয়ে।

গত ২৫ মে, আমেরিকার মিনেসোটা শহরে একটি মেট্রোপলিশের সামনে জর্জ ফ্লয়েডকে খুন করেন ডেরেক চৌভিন নামে এক সাদা চামড়ার পুলিশ। কালো চামড়ার জর্জের গলার উপর চেপে বসেছিল ডেরেকের হাঁটু। নিঃশ্বাস নিতে না পেরে জর্জ যখন মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলেন, তখন যেন খানিকটা তৃপ্তিই অনুভব করেছিলেন ডেরেক। কিন্তু এই বিদ্বেষ তো সভ্যতার শেষ কথা নয়। তাই ঘটনার পরপরই আমেরিকা জুড়ে ওঠে প্রতিবাদের ঝড়। আমেরিকা ছাড়িয়ে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পরে ইউরোপের দেশগুলিতেও। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিবাদের চেহারা অহিংস। যদিও কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত দাঙ্গার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু সব জায়গাতেই নিরাপত্তার অঙ্গীকার স্পষ্ট। এমনকি বাহ্যিক দৃষ্টিতে পুলিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠলেও, অনেক পুলিশ অফিসার নিজেরাই এগিয়ে এসেছেন প্রতিবাদের রাস্তায়।

লাসভেগাস থেকে নিউ ইয়র্ক, টেক্সাস থেকে কেনটাকি, পুলিশের থানা ঘিরে ফেলেছে উত্তেজিত জনতা। কোথাও প্রতিবাদী জমায়েত, কোথাও মিছিল, কোথাও বা নীরব প্রার্থনা; বর্ণবিদ্বেষ মোছার অঙ্গীকার সর্বত্র। টেক্সাস শহরের এক পুলিশ অফিসার প্রকাশ্যে প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার ইচ্ছাও জানিয়েছেন। এমনাকি নেদারল্যান্ড বা লন্ডনের সাদা চামড়ার মানুষরাও ডেরেকের কাজের নিন্দায় রাস্তায় নেমেছেন। প্রতিবাদীদের অভিনব মিছিলের ছবি পোস্ট করে প্রশংসা করেছে টেনেসি পুলিশ বিভাগ। আর সবচেয়ে অভিনব ঘটনাটি ঘটেছে মিসৌরির কেনেসাস শহরে। সেখানে প্রকাশ্যে প্রতিবাদীদের সঙ্গে রাস্তায় পা মিলিয়েছেন পুলিশ কর্তারাও। রাস্তায় জড়িয়ে ধরেছেন পরস্পরকে। পৃথিবীর সমস্ত মানুষের মন থেকে হয়তো বিদ্বেষ ঘুচবে না এর পরেও। কিন্তু সমস্ত পৃথিবীর রাজপথে এখন ভালোবাসার কাছে পরাজিত বর্ণবিদ্বেষ। রাস্তার ধারে ধারে প্রতিবাদী গ্রাফিটির বয়ান এখন জর্জ ফ্লয়েডের মুখ। হিংসার মহামারীর বিরুদ্ধে মানুষের সভ্যতার এক অভিনব রূপকথার সাক্ষী থাকল ২০২০ সাল।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ভালোবাসার কাছে সবই তুচ্ছ, বর্ণবৈষম্য সরিয়ে ঘর বেঁধেছেন এই বাঙালিরাও