অস্থির সময়ের প্রতিবাদ সাহিত্যেই, নতুন ইস্তাহার প্রকাশ বাংলার সাহিত্যিকদের

টিভি বা খবরের কাগজে নজর রাখলেই এখন দেখা যাচ্ছে হিংসার ছবি। বাবার মৃতদেহের সামনে বসে আছে তাঁর একমাত্র ছেলে। এখনও সাবালক হয়নি। তাঁদের দোষ ঠিক কী, সে এখনও বোঝেনি। এরকম অনেকেরই ভয় ঢুকে গেছে; দরজা, জানলা বন্ধ করে রেখে সুসময়ের আশা করছে। কিন্তু কবে আসবে? নানা মহল থেকে প্রতিবাদের স্বর উঠছে। মানুষ রাস্তায় নামছে। নিজেদের মতো করে রুখে দাঁড়াচ্ছে এই কালো সময়ের বিরুদ্ধে। সেখানে দাঁড়িয়ে, সাহিত্যের মধ্যে দিয়েই প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন বাংলার কবি, সাহিত্যিকরা। এই সংকটের সময় দাঁড়িয়েই তাঁরা প্রকাশ করেছেন নিজেদের ইস্তাহার।

“ম্যাগাজিন শব্দটি আমি লক্ষ করেছি রাইফেল ও কবিতার সঙ্গে যুক্ত।” কবি ফাল্গুনী রায়ের এই লাইনটিই যেন এখানে বীজমন্ত্র হয়ে উঠে এসেছে। ‘আমাদের ইস্তাহার’ শুধু কবিদের নয়, এ যেন প্রতিটা মানুষের ভাষা হয়ে উঠে এসেছে। উৎসর্গপত্রে লেখা- ‘যাঁরা আক্রান্ত’। এ ছাড়া আর কাউকে উৎসর্গ করা বোধহয় যেতও না। পত্রিকায় উঠে এসেছে নির্মলকুমার বসু’র ‘ছেচল্লিশের ডায়েরি’-এর কিছু অংশ। সেই ছেচল্লিশ, যে সময় স্বাধীনতার ‘আনন্দে’ যেমন দেশভাগের সূচনা হয়, তেমনই সাম্প্রদায়িক রক্ত ছড়িয়ে পড়ে বাংলার রাস্তায় রাস্তায়। প্রতিটা দিন ছিল আতঙ্কের, ভয়ের। এই বুঝি শেষ সময় ঘনিয়ে এল। আজও অনেকের মনে সেই কথাই উঠে আসছে…

আরও পড়ুন
ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বার্লিন অলিম্পিকে হিটলারকে স্যালুট করল না ভারতীয় দল

জীবনানন্দ দাশের ‘নিরীহ ক্লান্ত মর্মান্বেষীদের গান’-এর শেষাংশও উঠে এসেছে এখানে। এসেছে রবি ঠাকুরের ‘গোরা’। উৎপলকুমার বসু, সোমনাথ হোর, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, অরুণ মিত্র, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা যেন বারবার তুলে ধরছে শিরদাঁড়া শক্ত করার কথা; গলার জোর বাড়িয়ে প্রতিবাদ করার কথা। ‘একটি আত্মার শপথ’ কবিতায় বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাই বলেছিলেন -

“মারতে জানা যত সহজ
মরতে জানা তত সহজ নয়,
তাই কি ভাবিস? তাই কি দেখাস ভয়?”

এই ভয়ের বিরুদ্ধে, এই চোখ রাঙানির বিরুদ্ধেই সবার প্রতিবাদ। ‘আমাদের ইস্তাহার’-এর সম্পাদনা, সঙ্কলনের দায়িত্বে রয়েছেন অরুণাভ সরকার, রাহুল পুরকায়স্থ এবং গৌতম বসু। খবরের কাগজের প্রতিবেদনের ওপর নামাঙ্কন করেছেন সঞ্জীব চৌধুরী।

Latest News See More