ভাদোদরা বা বরোদা। ভারতের অন্যতম একটি শহর। ঝকঝকে পরিষ্কার শহর জুড়ে যেমন সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে সবুজের আধিক্য। তেমনই জড়িয়ে রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য। এবার সেই ঐতিহ্যতেই কোপ পড়তে চলেছে অগ্রগতির, উন্নয়নের। আর তার প্রতিবাদেই সরব হল ভদোদরা রাজ-পরিবার এবং ফতেসিং জাদুঘর পরিচালন সমিতি। প্রতিবাদে অঞ্চলের মানুষদেরও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আর্জি জানায় রাজ-পরিবার।
ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের অন্যতম প্রিন্সলি স্টেট হিসাবে পরিগণিত হত বরোদা। ব্রিটিশ রাজের সময়ও নিজদের প্রভাব এবং অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল রাজপরিবার। স্বাধীনতার পরে ১৯৪৭ সালে ডোমিনিয়ন অফ ইন্ডিয়াতে যুক্ত হয় বরোদা রয়্যাল স্টেট। বরোদার অন্যতম আকর্ষণ প্রতাপ বিলাস রাজবাড়ি। ১০৬ বছরের পুরনো এই রাজবাড়ি তৈরি করেছিলেন মহারাজা তৃতীয় সিয়াজিরাও। ৫৫ একর জমির ওপরে তৈরি এই প্রাসাদ ছিল তাঁর ছেলে যুবরাজ ফতেসিং গায়েকওয়াড় এবং তাঁর পুত্রবধু যুবরানী পদ্মাবতীদেবীর বাসভবন। রাজা ফতেসিং গায়েকওয়াড়ের পুত্র প্রতাপসিংরাও এই রাজপরিবারের শেষ রাজা ছিলেন। তাঁর নামেই নামকরণ করা হয় এই প্রাসাদের।
ঐতিহ্যবাহী এই প্রাসাদের সামনেই রয়েছে রাজা বাগ বাগান। সেই বাগানের জায়গাতেই এবার বহুতল তৈরি সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলমন্ত্রক। তবে ভারত সরকার অধিগ্রহণ করার পর ১৯৫২ সাল থেকে এই প্রাসাদের একাংশে রেল স্টাফ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তা নিয়ে আপত্তিও ছিল না রাজপরিবারের। তবে জাতীয় রেল পরিবহন ইনস্টিটিউট এবং রেলের অন্যান্য অফিসগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্যই এই নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে রেলমন্ত্রক। যার জেরে ক্ষুব্ধ রাজ পরিবারের সদস্য সমরজিৎসিং গায়েকওয়াড় এবং অন্যরাও।
তবে এই প্রথম না। ২০১৪ সালে বরোদা শহরের প্রাণকেন্দ্র নজরবাগ প্রাসাদকেও ভেঙে ফেলা হয়েছিল সরকারি নির্মাণের কাজে। ধ্বংস হয়েছিল ঐতিহ্য। সমরজিৎসিং গায়েকওয়াড জানান, প্রতাপ বিলাস প্রাসাদের সামনের রাজা বাগের ওপরে এই বহুতল প্রতিষ্ঠিত হলে ঐতিহ্য হারাবে প্রাসাদের। সেইসঙ্গেই হারাবে ইতিহাসের প্রাসঙ্গিকতাও। বহুবছরের এই ঐতিহ্যরক্ষার দায় যে ভারত সরকারেরই, মনে করিয়ে দেন তিনি।
আরও পড়ুন
হারাচ্ছে আলপনার ঐতিহ্যও, নববর্ষ ঘিরে আক্ষেপ শান্তিনিকেতনের শিক্ষকের
রাজপরিবারের তরফে আর্জি জানানো হয়েছে নতুন এই নির্মাণ কার্যটি রাজা বাগে না করে, প্রাসাদের ৯০ ডিগ্রি কোণে একটি উন্মুক্তস্থানে তৈরি করার জন্য। এনআরটিআইয়ের ডেপুটি কমিশনার এ বিষয়ে বলেন, নির্মাণের নকশা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রাসাদের নান্দনিকতা এবং ঐতিহ্যরক্ষার চেষ্টা করবেন স্থপতিরা, ভরসা দেন তিনি।
আরও পড়ুন
স্বীকৃতির খোঁজে বাংলার ঐতিহ্যবাহী মসলিন, আবেদন জিআই-এর
উল্লেখ্য নজরবাগ প্রাসাদ ভেঙে নতুন নির্মাণের সময়ও প্রতিবাদ গড়ে উঠেছিল ভাদোদরায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এবারে তাই নির্মাণ শুরুর আগে থেকেই সরব হয়েছে রাজপরিবার। তবে এখনও নীরব রেলমন্ত্রক। রেলের এই সিদ্ধান্তে কার্যত দোলাচলে ওই বাগানের ভাগ্য। তবে কি ভারতের মাটি থেকে মুছে যাবে আরও একটি ঐতিহ্য? উত্তর জানা নেই...
Powered by Froala Editor