“হরিণশাবক রাজার কাছে বিচার চাইতে যায়
নিখোঁজ মা’কে খুঁজতে খুঁজতে সে আজ হয়রান
রাজার আশ্বাস মিলেছে মা’কে ফিরে পাবে
রাজ আদেশে রাজভবনের ক্যাম্পে মেলে ঠাঁই”
সাম্প্রতিক সময় এরকম অনেক ‘হরিণশাবক’ তাঁর মা’কে হারিয়ে ফেলেছে। রাতারাতি কোনো পরিবারের সঙ্গে জুড়ে গেছে ‘বিদেশি’ তকমা। সৌজন্যে, এনআরসি। সাম্প্রতিক সময় ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই নিয়ে প্রতিবাদও হয়েছে। আর সেই আবহেই ৪৪তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় উদ্বোধন হতে চলেছে প্রসূন ভৌমিকের কবিতার বই ‘আগলে রাখো’-র।
সাহিত্য জগতে কবি প্রসূন ভৌমিক একটি পরিচিত নাম। নব্বইয়ের দশকের বিখ্যাত পত্রিকা ‘বিজল্প’-এর সম্পাদক ছিলেন তিনি। এখন বিজল্প প্রকাশনীরও কর্ণধার। তার পাশাপাশি একজন কবিও বটে। সাম্প্রতিক সময়ের এনআরসি নিয়ে গোটা দেশের অবস্থা, শাসকের চোখ রাঙানি, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ— এই সমস্ত কিছু অস্বীকার করতে পারি না আমরা কেউ। প্রসূনবাবুও সরে আসেননি সেখান থেকে। প্রতিবাদ করেছেন; নিজের লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন বক্তব্য। ‘আগলে রাখো’-এর প্রতিটি কবিতায় সেই দর্শনেরই ছোঁয়া।
শুধু এনআরসি নয়, ভারতের আর্থসামাজিক অবস্থা ও বিভিন্ন সাম্প্রতিক ঘটনাও ছুঁয়ে গেছে তাঁর লেখায়। যেখানে কবি প্রশ্ন তুলেছেন ধর্মের ভেদাভেদি নিয়ে, হিংসা নিয়ে, আর্থিক মন্দা নিয়ে। ‘ডাক’ কবিতাটায় এটারই একটি প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে -
“তোমার বাড়ি ঘেরাও এখন, ঘিরেছে বিদ্বেষ
তোমার ব্যাঙ্কে গান্ধী হাঁপায় তীব্র শ্বাসরোধে
তোমার তুলসী গাছের তলায় মৃত্তিকা নিখোঁজ
চিঠির বাক্সে লুকিয়ে আছে দখল পরোয়ানা”
বাস্তবিকই, এই মুহূর্তে আমাদের চারপাশে দেখলে অনেক মানুষই নতুন করে মাটি খুঁজছেন। এতদিন, এত বছর তাঁরা এই দেশে থেকেছেন, কাজ করেছেন, দেশের মাটিকে ভালবেসেছেন। এখন তাঁদেরই নতুন করে নিজেদের পরিচয় দিতে হচ্ছে। যেন নতুন এক কাঁটাতার তৈরি হচ্ছে দেশ জুড়ে। আর তা করা হচ্ছে সচেতনভাবে, বিশেষ পরিকল্পনা করে। কবি প্রসূন ভৌমিকের লেখা সেই ঘর ভাঙারই কথা বলে ওঠে— “কাঁটাতারের এ’পাড়ে ফুল, ও’পাড়ে মৌচাক/ মৌমাছিরা ওড়ে”।
আগামীকাল, বিকেল সাড়ে চারটেয় কলকাতা বইমেলায় এসবিআই অডিটোরিয়ামে প্রকাশ পাবে কবি প্রসূন ভৌমিকের কবিতার বই ‘আগলে রাখো’। বইটির প্রকাশনায় বিজল্প প্রকাশনী।