আগাম তথ্য পেয়েও যুবতী-হত্যা রুখতে ব্যর্থ প্রশাসন, ফুঁসছে কুয়েত

বেশ কিছুদিন ধরে কয়েকজন যুবক উত্যক্ত করে চলেছিল ফারাহ হামজা আকবরকে। রাস্তায় একাধিকবার শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছিলেন কুয়েতের এই যুবতী। অথচ প্রশাসন ছিল অদ্ভুতভাবে নিশ্চুপ। আর সেই শব্দহীন পাপের অন্তিম পরিণতি হয়ে উঠল মৃত্যু। হুমকি আগেই দেওয়া হয়েছিল। এক সপ্তাহ আগে সেই হুমকিকে সত্যি প্রমাণ করে প্রকাশ্য রাস্তায় ফারাহকে খুন করলেন সেই যুবকরা। ফারাহ হাজমার মৃত্যুকে ঘিরে আবারও উঠে এল মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েতের নারী-নিরাপত্তার বিষয়টি। প্রশাসন এখনও নিশ্চুপ। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর কাছে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছেন অসংখ্য তরুণী। এগিয়ে এসেছেন বহু তরুণও।

শুধুই কুয়েত নয়, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই নারী-নিরাপত্তা একটি জ্বলন্ত সমস্যা। তবে কুয়েতের সমস্যা সম্ভবত সবচেয়ে জটিল। দেশের পার্লামেন্টে একটি মাত্র মহিলা সংরক্ষিত আসন রয়েছে। অথচ সেখানেও কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। কারণ দেশের সমাজ ব্যবস্থায় মহিলাদের বাড়ির বাইরে পা রাখাই নিরাপদ নয়। ঘরের মধ্যেও কি নিরাপদ? সামাজিক মাধ্যমজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে অসংখ্য গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা। মনে হয় সারা পৃথিবীর মধ্যে বুঝি কুয়েতেই গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। অবশ্য সরকারি নথি সেকথা বলে না। আসলে কুয়েতের সরকারি নথিতে গার্হস্থ্য হিংসার প্রায় কোনো উল্লেখই নেই। নেই শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের মতো ঘটনার উল্লেখও। এইসব যেন প্রশাসনের কাছে নিতান্ত সাধারণ বিষয়।

কুয়েতের নারীবাদী সংগঠন ‘কুয়েতি ফেমিনিস্ট’-এর বক্তব্য অনুযায়ী, দেশের শিক্ষিত মানুষের মধ্যে এই সমস্যা অনেকটাই কমেছে। তবে সেই মাত্রাটা একেবারেই আশাপ্রদ নয়। সব মিলিয়ে বলতেই হয়, কুয়েতে মহিলারা নিরাপদ নন। আর সরকারই যখন সেই নিরাপত্তাকে অস্বীকার করে, তখন আর কিছুই করার থাকে না। কুয়েতের আইনজীবী ওমানিয়া আসরফের মতে, তাঁর সামাজিক মর্যাদা তাঁর পরিবারের মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে খানিকটা। কিন্তু সামগ্রিক চেহারা দেখে আতঙ্ক জাগে। বিশেষ করে যাযাবর বেদুইন সম্প্রদায়ের মহিলাদের অবস্থা রীতিমতো শোচনীয়। আর তাঁদের অভিযোগম কোন প্রশাসনই বা নথিবদ্ধ করবে? তাঁদের নাগরিকত্বের ব্যবস্থাই যে করা হয়নি আজও।

শুধু তাই নয়, বেদুইন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রচারের কোনো ব্যবস্থাও করা হয়নি এত বছর ধরে। আর এই অশিক্ষার কারণেই কুয়েত আজও নিমজ্জিত এক মধ্যযুগীয় পুরুষতান্ত্রিকতার অন্ধকারে। তবে ফারাহর মৃত্যু সমস্ত ব্যবস্থার সামনে একটা বড়ো ধাক্কা হয়েই এসেছে। সারা দেশজুড়ে অসংখ্য গোপন সংগঠন গড়ে উঠেছে। সামাজিক মাধ্যমগুলিও কুয়েতের মহিলাদের পরিচয় গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশের মধ্যে থেকে লড়াই চালিয়েছেন এতদিন ধরে। কিন্তু দীর্ঘ লড়াইতেও বারবার এসেছে ব্যর্থতা। এবার তাই সমস্ত বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন কুয়েতের মহিলারা। ফারাহর পরিণতি যেন আর কোনো মহিলার না হয়। সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ একসঙ্গে এগিয়ে এলে কি তা সম্ভব হবে না?

আরও পড়ুন
ধান খাওয়ার ‘অপরাধ’, ৩৩টি বাবুই ছানাকে পুড়িয়ে হত্যা বরিশালে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ফ্লয়েডের হত্যাকারীর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ, উত্তাল মিনেপলিস

Latest News See More