দেশে চলছে ফুটবলের মহাযুদ্ধ। কোপা আমেরিকা। গোটা বিশ্বের নজর সেদিকে থাকলেও, খোদ ব্রাজিলের নাগরিকদের মধ্যেই যেন উন্মাদনা নেই কোনো। বরং তাঁরা ফুঁসছেন রাগে। প্ল্যাকার্ড আর পোস্টার নিয়ে নেমে আসছেন রাস্তায়। কারণ, আকণ্ঠ অসহায়তার মধ্যেই যে দিন কাটছে তাঁদের। কোপার এই উৎসবের মরশুমেই গোটা দেশ যেন শ্মশান। তবুও নিষ্ক্রিয় দেশের প্রশাসন।
গতকালই আমেরিকার পর দ্বিতীয় রাষ্ট্র হিসাবে ব্রাজিলে কোভিডে মৃতের সংখ্যা পেরিয়ে গেল ৫ লক্ষের গণ্ডি। আর সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ কোটি ছুঁই ছুঁই। দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে বর্তমানে ভারতকেও ছাপিয়ে গেছে ব্রাজিল। প্রতিদিন সেখানে আক্রান্ত হয়ে চলেছেন ৭০ হাজারের মতো মানুষ। অন্যদিকে গড় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার। কিন্তু মহামারীর প্রায় দেড় বছর সময় পেরিয়ে এসেও, এখনও পর্যন্ত সেভাবে চিকিৎসা পরিকাঠামো জোরালো করে উঠতে পারেনি বলসোনারো সরকার। পাশাপাশি ভ্যাকসিনেশনও চলছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। বলসোনারো সরকারের এই ‘অকর্মণ্যতা’-তেই ক্ষোভে ফুঁসছে ব্রাজিলবাসী।
আজ নয়, মহামারীর শুরুর সময় থেকেই বেশ গা ছাড়া মনোভাব ছিল ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জের বলসোনারোর। এমনকি কোভিডকে ‘সাধারণ জ্বর’ বলে অভিহিত করেছিলেন তিনি। পরে লকডাউন ঘোষণা করলেও, ততদিনে শুরু হয়ে গেছে গণসংক্রমণ। ফলে লকডাউনের ফলে লাভের লাভ হয়নি কিছুই। উল্টোদিকে কাজ হারিয়েছেন অজস্র মানুষ। লাফিয়ে বেড়েছে দেশের উপার্জনহীনতার হার। ভেঙে পড়েছে গোটা দেশের অর্থনীতি।
আর ভ্যাকসিনেশন? এখনও পর্যন্ত ব্রাজিলে মাত্র ১১ শতাংশ নাগরিক টিকার দুটি ডোজ পেয়েছেন। ২৬টি প্রদেশের মধ্যে ২৪টিতেই এখনও পর্যন্ত ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের টিকাকরণ করে উঠতে পারেনি ব্রাজিল। বিশ্বের উন্নত দেশগুলি তো বটেই, এমনকি পেরু, ভেনেজুয়েলার মতো লাতিন আমেরিকার দেশগুলির থেকেও ভ্যাকসিনেশনে পিছিয়ে রয়েছে বলসোনারোর প্রশাসন। ফলে, মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়েই চলেছে ক্রমশ।
আরও পড়ুন
গণহত্যাকারী প্রেসিডেন্টের শাস্তি চাই, বিক্ষোভে উত্তাল ব্রাজিলের রাজধানী
এই ক্ষোভেই গতকাল রাস্তায় নামেন হাজার হাজার মানুষ। কারোর হাতে প্ল্যাকার্ড— ‘গেট আউট বলসোনারো’; কেউ আবার লিখেছেন ‘গণহত্যাকারী শাসক’। আওয়াজ উঠেছে বেকারত্ব বৃদ্ধি নিয়েও। দেশে যখন অর্থনৈতিক মন্দা চরমে পৌঁছেছে, সেইসময় শেষ মুহূর্তে কোপা আমেরিকার মতো খরচসাপেক্ষ টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্বই বা নিল কেন ব্রাজিল? সেই প্রশ্নই তুলছে জনগণ। সেখানেও যে সুরক্ষাবলয় জোরদার করা হয়েছে, তেমনটা নয়। ইতিমধ্যেই কোপার সঙ্গে যুক্ত সদস্যদের মধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ জন। সংক্রমিত হয়েছেন বেশ কিছু দেশের খেলোয়াড়রাও।
আরও পড়ুন
কোভিডে উপজাতি-মৃত্যুর সংখ্যা গোপন! অভিযোগে বিদ্ধ ব্রাজিল সরকার
মাস দুয়েক আগের কথা। ব্রাজিলে মৃত্যুর সংখ্যা চার লক্ষ ছোঁয়ার পর এই একই ধরনের গণবিক্ষোভ লক্ষ করা গিয়েছিল গোটা ব্রাজিলজুড়ে। কিন্তু তাতে কোনোরকম হেলদোলই দেখা যায়নি রাষ্ট্রপতির। এবারেও যেন উদাসীন তিনি। কোথাও আবার জনসভায় গিয়ে ভ্যাকসিনেশনকে ব্যঙ্গও করতে দেখা গেছে তাঁকে সাম্প্রতিক সময়ে। এই পরিস্থিতির বদল ঠিক কবে আসবে— তা জানা নেই কারোরই! ততদিনে আরও কত মৃত্যুমিছিল দেখতে হবে ব্রাজিলকে? থেকে যাচ্ছে সেই প্রশ্নটাই…
আরও পড়ুন
ব্রাজিলের উপজাতির সঙ্গে বে-আইনি উত্তোলকদের সংঘর্ষ, উত্তপ্ত আমাজন
Powered by Froala Editor