‘প্রাণে না বাঁচলে উন্নয়নে লাভ কী?’ সিমেন্ট কারখানার বিরুদ্ধে সরব সাঁকরাইল

“বাচ্চার জন্য দুধ রেখে হয়তো মা ঘরে গিয়েছেন। দুধ ঠান্ডা হলে বাচ্চাকে খাওয়ানো হবে। এইটুকু সময়ের মধ্যেই দেখা যায় দুধের মধ্যে ভাসছে সিমেন্টের কণা।” বলছিলেন মহিষগোট পরিবেশ সুরক্ষা কমিটির সভাপতি বাসুদেব বর। হাওড়া জেলার সাঁকরাইলের কাছে অম্বুজা সিমেন্টের এই কারখানা বিশ বছরের পুরনো। কিন্তু সম্প্রতি সেই দূষণের মাত্রা রীতিমতো সীমা ছাড়িয়েছে। আশেপাশে গ্রামের বাতাস সর্বক্ষণ ধুলোয় ঢাকা। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তাই বেছে নিয়েছেন আন্দোলনের পথ। বাসুদেব বরের কথায়, “আমাদের গ্রামের উন্নয়নের হাজার প্রতিশ্রুতি তো এতদিন ধরে শুনে আসছি। কিন্তু প্রাণে না বাঁচলে উন্নয়ন করে কী হবে?”

পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী সৌরভ প্রকৃতিবাদী বলছেন, “১৯৯৮-২০০০ সাল নাগাদ যখন কারখানা তৈরি হয় তখন এত দূষণ ছিল না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দূষণের মাত্রা বেড়েছে।” সম্প্রতি মহিষগোট, চতুর্ভূজকোটি এবং ভগবতীপুরের গ্রামবাসীরা নিজেদের উদ্যোগেই বাতাসের গুণমান পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। আর একটি বেসরকারি সংস্থার পরিমাপক যন্ত্রে দেখা যায় পিএম ২.৫ এবং পিএম ১০ কণার পরিমাণ নিরাপদ মাত্রার চেয়ে কোথাও ১৬ গুণ এমনকি কোথাও ২৫ গুণ বেশি। “তবুও কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনো রকমের উদ্যোগ চোখে পড়ে না। এমনকি এর মধ্যে কারখানার উৎপাদন বাড়ানোর অনুমতি চেয়েও আবেদন জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেই আবেদনে জানানো হয়, দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। সেটা যে মিথ্যা দাবি, তা বোঝাই যায়।” বলছিলেন সৌরভ প্রকৃতিবাদী।

এর মধ্যে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার চেষ্টাও চালায় গ্রামবাসীরা। কিন্তু কোনোভাবেই কোনো মীমাংসার সূত্র বেরিয়ে আসেনি। বাসুদেব বর জানালেন, “সরকারি কর্মচারীরা আমাদের এসে বলছেন সবসময় মাস্ক পরে থাকতে। প্রথমে ভেবেছিলাম করোনার জন্য। পরে বললেন, না কারখানার দূষণের জন্য। আমরা প্রশ্ন করেছিলাম, সদ্যজাত শিশুদেরও কি তাহলে মাস্ক পরে থাকতে হবে?” তাঁর আক্ষেপ, “এই নির্বাচনের সময় নেতানেত্রীরা নানা বিষয় নিয়েই কথা বলছেন। কিন্তু আমাদের কথা কেউ বলছেন না।” তাই শেষপর্যন্ত প্রতিরোধের রাস্তা নিজেরাই খুঁজে নিতে চাইছেন গ্রামবাসীরা। আশেপাশের গ্রামগুলি মিলিয়ে সচেতনতা তৈরির কাজও চলছে। আগামী ৪ এপ্রিল দূষণ উপদ্রুত গ্রামগুলির উপর দিয়ে একটি মিছিলের ডাক দিয়েছে মহিষগোট পরিবেশ সুরক্ষা কমিটি।

১৯৮০ সাল থেকেই চলেছে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া। দফায় দফায় বঞ্চিত হয়েছেন গ্রামবাসীরা। অনেকেই এখনও জমির দাম পর্যন্ত পাননি। কিন্তু তার থেকেও বড়ো প্রশ্ন জীবন। সিমেন্টের ধুলো মানুষের ফুসফুস বন্ধ করে দিলে জমির দাম বা কর্মসংস্থান কোনোকিছুই গ্রামবাসীদের বাঁচাতে পারবে না। জীবনের এই লড়াইতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও ভাবছেন গ্রামবাসীরা। শেষ পর্যন্ত কোনো মীমাংসার রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা, জানেন না কেউই।

আরও পড়ুন
ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ির সমস্ত দূষণ শুষে নিতে পারে এই উদ্ভিদ!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দূষণমুক্ত বায়ুই বাড়িয়ে তুলেছে পৃথিবীর উষ্ণতা, চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল গবেষণায়

More From Author See More

Latest News See More