দেখতে দেখতে সেপ্টেম্বর চলেই এল। আর কয়েকদিন গেলেই বাঙালির ঘরে ঘরে বেজে উঠবে ভোর চারটের রেডিও। নীল আকাশ, পেঁজা তুলোর মতো মেঘের মাঝে চণ্ডীপাঠ করবেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র; গানে গানে শুরু হবে দেবীপক্ষ, মহালয়া। যতই মলমাস আসুক না কেন, বাঙালির সবচেয়ে বড়ো উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় অনেক আগে থেকেই। দুর্গাপূজা বলে কথা! কুমারটুলি থেকে পাড়ার পুজো উদ্যোক্তা, শপিং মল— সব জায়গাতেই ব্যস্ততা তুঙ্গে…
ছবিটা এমনই হতে পারত এই বছরও। কিন্তু আজ সেখানেই বিঘ্ন ঘটেছে, সৌজন্যে করোনা ভাইরাস। আগস্ট পেরিয়ে সেপ্টেম্বরে হাজির হলেও তার দাপট কমেনি। বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় তো বটেই, ভারতেও পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক। ব্রাজিলকে সরিয়ে করোনা আক্রান্ত দেশের সারণিতে দুই নম্বরে উঠে এসেছে দেশ; আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ লাখ পেরিয়েছে। এখনও প্রতিদিন বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এই ভাইরাসে। মারাও যাচ্ছেন প্রচুর। যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন বের করা যায় এবং বাজারে আনা যায় তার চেষ্টায় আছেন সবাই।
পরিস্থিতি যেখানে এত ভয়ংকর, সেখানে দুর্গাপূজার মতো মেগা কার্নিভাল কি সুস্থভাবে উপভোগ করা যাবে? এই চিন্তা থেকেই নেট দুনিয়ায় বাঙালিদের একাংশ দাবি তুলেছেন দুর্গাপূজা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য। মল মাসের জন্য এমনিতেই মহালয়ার এক মাস পর পুজো শুরু হবে। সেই নাগরিকদের দাবি, করোনার জন্য পুজো পিছিয়ে ডিসেম্বরে করা হোক। এই প্রেক্ষিতটি সম্পর্কে প্রহরের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে কথা বললেন কবি যশোধরা রায়চৌধুরী। তিনি জানান, “এটা তো আমরা পড়েছি যে যুদ্ধের সময় রাম অকাল বোধন করেছিলেন বলে শরৎকালে দুর্গাপূজা শুরু হয়। নয়তো বসন্তকালেই শক্তিপুজো হত বাসন্তীপূজার মাধ্যমে। শরৎকালের দুর্গাপূজার সঙ্গে ‘অকাল’ শব্দটা জড়িয়ে আছে। আর এই পুজো তো স্রেফ ধর্মীয় গণ্ডিতে আটকে নেই। এর একটা সামাজিক রূপ আছে। অনেক মানুষের রুজি রোজগারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই পুজো। করোনা অতিমারী তো এখনও সামলানো যায়নি। প্রতিদিন যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে তা সত্যিই ভয়ের কারণ। মানুষও তো পুজোয় রাস্তায় বেরোতে ভয় পাবেন। আর করোনার জন্য বিশ্বের অনেক জায়গাতেই উৎসব পিছিয়ে এসেছে বা স্থগিত হয়েছে। আমাদের বইমেলাও পিছিয়ে যেতে পারে। এই সমস্ত কথা চিন্তা করেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম পুজো বা উৎসবটা যদি পিছিয়ে ডিসেম্বরে করা যায়।”
পুজো মানে রাত জাগা, প্যান্ডেলের বাইরে লম্বা লাইন। করোনা পরিস্থিতিতে সেই চেনা ছবি কি দেখতে পাবে শহর? যদি দেখেও, তাহলে করোনার আতঙ্ক আরও বেশি দানা বাঁধবে। সামাজিক দূরত্বের যাবতীয় নিয়ম ভেঙে যাবে। কিন্তু কুমোরপাড়ায় তো প্রস্তুতি তুঙ্গে। বড়ো বড়ো জায়গায় আগের মতো জাঁকজমক করে না হলেও, প্যান্ডেল তৈরির কাজও শুরু হয়ে গেছে বা কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হবে। কর্মী, শিল্পীরাও কাজের বরাত পেয়ে চলে গেছেন সেখানে। আর রাজনৈতিক চাপানউতোর, ভয় তো রয়েইছে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আর কি পেছোনো সম্ভব? “হ্যাঁ এটা ঠিক। আমাদের আরও আগে এই দাবিটা তোলা উচিত ছিল। এখন অনেক জায়গায় প্রস্তুতি চলছে। সেখানে দাঁড়িয়ে কতটা কী হবে বলা মুশকিল। আরও আগে দাবি তুললে ভেবে দেখতেন সবাই”, বলছিলেন যশোধরা রায়চৌধুরী। অতএব এটা হয়তো একটা ব্যর্থ প্রস্তাবেই পর্যবসিত হবে। তবু এমন বিকল্প চিন্তা যে উঠে এল, এই-ই বা কম কী!
আরও পড়ুন
২৬৩ বছরে প্রথমবার, বদলাচ্ছে শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর রীতি
Powered by Froala Editor