দুর্গা-কাহিনি ভারতবর্ষের চিরন্তন বীরগাথা। নানা কালে, নানা স্থানে, নানা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তার বিচিত্র রূপে প্রকাশ। মার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত 'দেবীমাহাত্ম্য' ওরফে 'দুর্গাসপ্তশতী' গ্রন্থটি এ বিষয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এই বইয়ের নামান্তর 'শ্রীশ্রীচণ্ডী'।
দুর্গাসপ্তশতীর কাহিনিসার বিশ্লেষণ করলে দেখি, রাজ্যভ্রষ্ট রাজা সুরথের কাছে মেধা মুনি বলছেন দুর্গার লীলাকাহিনি। এই লীলা, মূলত যুদ্ধলীলা। এ হলো অসুরহস্তে নিপীড়িত, রাজ্যচ্যুত দেবগণের রক্ষার্থে বারংবার চণ্ডীর আবির্ভাব এবং শত্রুদলনের বৃত্তান্ত। এই কাহিনি শুনে সুরথ স্বয়ং দেবীর তপস্যায় ব্রতী হলেন, চণ্ডীর আশীর্বাদ পেয়ে নিজ রাজ্য পুনরুদ্ধার করলেন তিনি।
এই যে শত্রুবিমর্দিনী দেবী চণ্ডী, তাঁর কাছে ভক্তের চিরন্তন প্রার্থনা— ‘দ্বিষো জহী’, দেবী, তুমি আমাদের শত্রুনাশ করো। মহাভারতের ভীষ্মপর্বে আমরা দেখি, কৃষ্ণের উপদেশে যুদ্ধারম্ভের সূচনায় দুর্গাস্তব করে দেবীর কাছে বিজয়লাভের আশীর্বাদ পাচ্ছেন অর্জুন। বাল্মীকি রামায়ণে নেই বটে, কিন্তু কৃত্তিবাস সহ পরবর্তী কবিরা রাম-রাবণের চূড়ান্ত যুদ্ধের আগে শ্রীরাম কর্তৃক অকালবোধন ও দুর্গোৎসবের বিবরণ দিয়েছেন।
কেবল পুরাণে বা কাব্যে নয়, ইতিহাসেও একই কথা। সুলতান আলাউদ্দীন খিলজির আক্রমণে পর্যুদস্ত রাজপুত বাহিনী যুদ্ধযাত্রার প্রারম্ভে স্মরণ করেছেন চিতোরেশ্বরী উবরদেবীকে, যিনি দুর্গারই প্রকাশ। মুঘলদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বিজয়ী হবার জন্য দেবী ভবানীর পূজা করেছেন মহারাষ্ট্রকুলতিলক শিবাজী মহারাজ। এমনকি আধুনিক যুগেও, ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে বঙ্কিমচন্দ্র সহ বুদ্ধিজীবীরা দুর্গাভক্তির রক্তবস্ত্রে আচ্ছাদিত করেছেন, ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর স্বাধীনতা-যুদ্ধের মূল মন্ত্রই হয়ে উঠেছে ‘বন্দে মাতরম্’। অর্থাৎ যখনই ভারতবাসী যুদ্ধকে নেহাত রাজনৈতিক হিংসার বদলে দিব্য অভিযান হিসাবে দেখতে এবং দেখাতে চেয়েছেন, তখনই তাঁরা চণ্ডীচরিত্র স্মরণ করেছেন। ফলে তাঁদের চোখে 'যুদ্ধ' হয়ে উঠেছে 'ধর্মযুদ্ধ'।
আরও পড়ুন
রুখা দেশের দুর্গাপুজো— শৈশবস্মৃতি
এই চণ্ডীচরিত্রের মধ্যে গবেষকেরা খেয়াল করেছেন আদিম মাতৃতন্ত্রের বীজ। শস্যবতী ভূমি স্বভাবতই মানুষের কাছে মাতৃবৎ, স্বভূমি রক্ষার্থে লড়াই তাই মাতৃবন্দনা। পুরুষতন্ত্রের নিপীড়নে নারী 'অবলা' পরিচয়ের বিরুদ্ধে এক চিরন্তন শক্তিমত্তার স্বর রয়েছে এই চণ্ডীচরিত্রে— নিপীড়িত সন্তানদের রক্ষার্থে এই কাহিনিতে রণরঙ্গে মেতে ওঠেন এক নারী। এই রণোন্মাদিনী বিপত্তারিণী মূর্তিকেই ভারতবাসী যুগে যুগে 'মা' বলে ডেকেছে, তাঁর কাছে চেয়েছে অভয়, চেয়েছে আশ্রয়।
এমন এক চণ্ডীস্মরণের ইতিহাস রয়ে গিয়েছে 'দশম গ্রন্থ' পুস্তকে, যা শিখদের এক পবিত্র ধর্মগ্রন্থ।
আরও পড়ুন
‘অশরীরী’ দুর্গা ও যামিনী রায়ের বাড়ির ‘মুণ্ড পুজো’
শিখ জাতির রক্তে রণোন্মাদনা জাগিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে গুরু গোবিন্দ সিংহ বর্ণনা করেছিলেন দুর্গা-কাহিনি। শিখদের অন্যতম পবিত্র ধর্মপুস্তক 'দশম গ্রন্থ'-এর তিনটি খণ্ডে (চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ) রয়েছে চণ্ডীগাথা— 'চণ্ডী চরিত্র উকতি বিলাস', 'চণ্ডী চরিত্র', এবং 'চণ্ডী দি বর'। মূলত দুর্গাসপ্তশতী অবলম্বনে এই খণ্ড তিনটি রচনা করেছেন কবি, তবে তাঁর বেশ কিছু নিজস্বতাও রয়েছে।
চণ্ডী চরিত্র উকতি বিলাস :
গ্রন্থের এই খণ্ড আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত। যিনি ‘আদি অপার অলেখ অনন্ত’, যিনি শিবশক্তি, চতুর্বেদ, ত্রিগুণ আদির স্রষ্টা, সেই পরমেশ্বরকে বন্দনা করে এই খণ্ডের আরম্ভ। অতঃপর, চণ্ডীর উদ্দেশে স্তবস্তুতি করে কবি কাব্যের মূল বিষয়ে প্রবেশ করেছেন। তিনি মার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত দুর্গাসপ্তশতী বিবিধ ছন্দে ভাবানুবাদ করেছেন। মূল দুর্গাসপ্তশতীর সঙ্গে তাঁর কাব্যের কয়েকটি পার্থক্য আমরা সংক্ষেপে আলোচনা করছি।
আরও পড়ুন
বেদাঙ্গ জ্যোতিষের নববর্ষ উদযাপন থেকেই শুরু দুর্গাপুজো?
এক, এই কাব্যে মেধা মুনির কাছে উপদেশ নিতে এসেছেন কেবলমাত্র রাজ্যভ্রষ্ট সুরথ। সমাধি বৈশ্য চরিত্রটির উল্লেখ নেই। মুনি একে একে মধুকৈটভ বধ, মহিষাসুর বধ ও শুম্ভনিশুম্ভ বধের বৃত্তান্ত রাজাকে শুনিয়েছেন। কিন্তু গ্রন্থের শেষে রাজার তপস্যা, দেবীর অনুগ্রহপ্রাপ্তি ও রাজ্য পুনরুদ্ধারের বিবরণ কবি আর উল্লেখ করেননি।
দুই, ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর ও অন্যান্য দেবগণের তেজঃপুঞ্জ থেকে চণ্ডীর আবির্ভাব এবং দেবগণের উপহারপ্রদত্ত বসন ভূষণ আয়ুধে সুসজ্জিত হয়ে সোল্লাস অট্টহাস্য— দুর্গাসপ্তশতীর এই সমস্ত বৃত্তান্ত আলোচ্য কাব্যে একেবারেই নেই। এখানে দেখা যাচ্ছে, মহিষাসুরের ভয়ে ত্রস্ত, পরাজিত দেবগণকে কৈলাসে আশ্রয় দিয়ে চণ্ডী স্বয়ং সিংহারূঢ়া মূর্তিতে চলেছেন যুদ্ধে, তাঁর স্মরণমাত্রেই বিবিধ অস্ত্র তাঁর কাছে উপস্থিত হয়েছে। মহিষবধের পর দেবী ফিরে এসেছেন শিবসমীপে। এই দেবী স্পষ্টতই শিবগৃহিণী।
আরও পড়ুন
পুজোর খেলা, ভাঙার খেলা
তিন, চূড়ান্ত যুদ্ধকালে মহিষাসুরের বিবিধ রূপান্তর গ্রহণ, দেবীর মধুপান ও হুঙ্কার প্রভৃতি বিবরণ দুর্গাসপ্তশতীতে লভ্য, কিন্তু আলোচ্য কাব্যে অনুল্লেখিত।
চার, শুম্ভ-নিশুম্ভের সঙ্গে ইন্দ্রাদি দেবতাদের যুদ্ধ ও পরাজয়ের বিস্তারিত বিবরণ কবির নিজস্ব সংযোজন।
পাঁচ, দেবগণের দুর্দশার কথা জেনে ক্রুদ্ধ চণ্ডীর দেহ থেকে ভয়ঙ্করী কালীর আবির্ভাব ঘটেছে, কিন্তু ত্রিভুবনের ভয়ত্রস্ত অবস্থা লক্ষ করে চণ্ডী কালীকে ‘পুত্রী’ সম্বোধন করে নিজ অঙ্গে বিলীন হতে আদেশ করেছেন। এটিও কবির নিজস্ব সংযোজন।
ছয়, দুর্গাসপ্তশতী গ্রন্থে দেবীর কাছে শুম্ভকে বিবাহের প্রস্তাব এনেছিল দৈত্যদূত সুগ্রীব। এখানে সেই প্রস্তাব এনেছে শুম্ভের ভ্রাতা নিশুম্ভ। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দৈত্যরাজের কাছে নিশুম্ভ কর্তৃক চণ্ডীর রূপের শৃঙ্গার-রসাক্ত বিবরণ।
সাত, যুদ্ধবর্ণনার ক্ষেত্রে কবি বেশ কিছু স্বাতন্ত্র্য অবলম্বন করেছেন। ধূম্রলোচনকে দেবী মূলগ্রন্থে হুঙ্কারেই ভস্ম করেছিলেন, এই কাব্যে তিনি তাকে রীতিমতো যুদ্ধ ও খড়গাঘাতে বধ করেছেন, এবং তার বাহিনীকে নেত্রাগ্নিতে ভস্মীভূত করেছেন। চণ্ডমুণ্ডকে চণ্ডী স্বয়ং বধ করেছেন (মূল গ্রন্থে তাদের বধ করেছিলেন চণ্ডীর কপালনির্গতা কালী)। রক্তবীজ বধের সময় অসুরের রক্তবিন্দু পানের ক্ষেত্রে কালীর পাশাপাশি জটাজুটধারিণী খর্পরহস্তা যোগিনীরাও চণ্ডীকে সাহায্য করেছেন। রক্তবীজ বধের পর বিষ্ণুর আদেশে দেবশক্তিগণ চণ্ডীর সাহায্যার্থে যুদ্ধে উপস্থিত হয়েছেন। অত:পর নিশুম্ভ বধ, শুম্ভের তিরস্কারের উত্তরে দেবী কর্তৃক শক্তিগণকে নিজ অঙ্গে বিলীন করার বৃত্তান্ত, শুম্ভ বধ, দেবগণের বিজয়োৎসব ও চণ্ডীস্তুতি, এবং কবির বিনয়বাক্যের মাধ্যমে কাব্যের এই অংশের সমাপন।
আট, মূল দুর্গাসপ্তশতীতে স্তবে তুষ্ট চণ্ডী তাঁর ভবিষ্য অবতারগণের লীলা এবং দেবীমাহাত্ম্য পাঠের পুণ্যফল বিবৃত করেছিলেন। এই ঘটনা আলোচ্য কাব্যে উল্লেখ করা হয়নি।
চণ্ডী চরিত্র ২:
এই খণ্ডটিও আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে মহিষাসুর বধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ। তারপর দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধ্যায় অবধি যথাক্রমে ধূম্রনয়ন বধ, চণ্ড-মুণ্ড বধ, রক্তবীজ বধ, নিশুম্ভ বধ ও শুম্ভ বধের বৃত্তান্ত। সপ্তম অধ্যায়ে বিজয়োৎসব ও চণ্ডীস্তব, অষ্টম অধ্যায়ে সেই স্তবপাঠের পুণ্যফলের বিবরণ।
এই খণ্ডে, মূল দুর্গাসপ্তশতী থেকে কবি কোথায় কোথায় স্বতন্ত্র, সংক্ষেপে বলি।
এক, প্রথম অধ্যায়ে কৈলাসে আগত দেবগণের সাহায্যার্থে চণ্ডী যুদ্ধে গমন করেছেন। এই দেবী মূলগ্রন্থের ন্যায় অনন্তভুজা কিংবা অষ্টাদশভুজা নন, ইনি স্পষ্টতই অষ্টভুজা। দেবগণের তেজ একত্রীভূত হয়ে চণ্ডীর আবির্ভাব ও অস্ত্রাদি উপহারপ্রাপ্তির বিবরণ এই খণ্ডেও অলভ্য। মহাযুদ্ধের পর, মহিষাসুরকে বধ করেছেন চণ্ডীর ললাটনির্গতা কালী, এবং মহিষের আত্মা ব্রহ্মরন্ধ্র থেকে নির্গত হয়ে পরমজ্যোতিতে বিলীন হয়েছে।
দুই, দুর্গাসপ্তশতী অনুসারে (এবং কবির অব্যবহিত পূর্বের রচনাতেও সেইরকমই) শুম্ভ ও নিশুম্ভ প্রথমে দেবীর রূপমোহবশে বিবাহপ্রস্তাব পাঠায়, পরে দেবীকে বীর্যশুল্কা জেনে ক্রুদ্ধ হয়ে যুদ্ধের আয়োজন করে। এখানে কিন্তু পরাজিত দেবগণকে দেবীলোকে আশ্রয় দিয়ে দেবীই কুপিতা হয়ে যুদ্ধযাত্রা করেছেন।
তিন, ধূম্রনয়ন বধ হয়েছে চণ্ডীর হুঙ্কারে নয়, কালিকার হস্তে।
চার, দুর্গাসপ্তশতীতে রক্তবীজ বধের পূর্বেই দেবতারা ব্রহ্মাণী, বৈষ্ণবী, মাহেশ্বরী প্রভৃতি শক্তিকে চণ্ডীর সাহায্যার্থে প্রেরণ করেছিলেন, এবং চণ্ডীর প্রেরণায় শিবদূতী মহাদেবকে শান্তিপ্রস্তাব সহ অসুর-শিবিরে প্রেরণ করেছিলেন। এখানে সেই ঘটনাক্রম অনেকটাই পরিবর্তিত। রক্তবীজ বধের পরে শক্তিবাহিনী উপস্থিত হয়েছেন, এবং তাঁদের সানুপুঙ্ক্ষ বিবরণ কবি দেননি। শিবের দৌত্যকর্মের ঘটনাটি ঘটেছে আরও দেরীতে, নিশুম্ভ বধের পরে। এবং, ক্ষুব্ধ শুম্ভের সম্মুখে দেবীর নিজতত্ত্ব প্রকাশ ও অন্যান্য শক্তিগণের চণ্ডীর তনুতে বিলীন হবার ঘটনাটি একেবারেই বাদ পড়েছে।
এই অংশে কোনো ঋষি চণ্ডীচরিত্রের বক্তা নন, কবি স্বয়ং বক্তা। এটি সংস্কৃত দুর্গাসপ্তশতীর আরও একটি ভাবানুবাদ, যা কবির পূর্ববর্তী ভাবানুবাদ থেকে বেশ কিছু জায়গায় আলাদা।
চণ্ডী দি বর:
এই তৃতীয় খণ্ডটিতে যুদ্ধবিবরণ সংক্ষিপ্ত ও সংহত। পরমেশ্বর-বন্দনা ও গুরু নানক সহ পূর্বাচার্যগণকে স্মরণ করে এই খণ্ডের আরম্ভ। অতঃপর মহিষ-পীড়িত ইন্দ্রের কৈলাসে আশ্রয়গ্রহণ, দেবীর যুদ্ধযাত্রা ও মহিষাসুর বধ বর্ণিত। তারপর দুর্গাসপ্তশতী অনুসারে একে একে ধূম্রলোচন, চণ্ড-মুণ্ড, রক্তবীজ, নিশুম্ভ ও শুম্ভ বধের বিবরণ। অতঃপর দুর্গামাহাত্ম্যপাঠের ফলশ্রুতি হিসাবে মোক্ষপ্রাপ্তির আশ্বাস দিয়ে কাব্যের সমাপ্তি।
গুরু গোবিন্দ সিংহের চণ্ডীচরিত্র বর্ণনার কয়েকটি প্রবণতা চিহ্নিত করা যেতে পারে। তিনি যে মূল দুর্গাসপ্তশতীর আক্ষরিক অনুবাদ করেননি, তা আমরা আগেই সানুপুঙ্ক্ষভাবে আলোচনা করেছি। তাঁর কাব্যে রৌদ্ররসের প্রাধান্যের কথা তিনি নিজেই উল্লেখ করেছেন। যুদ্ধের বিস্তারিত বর্ণনা তাঁর রচনার একটা বড়ো অংশ দখল করে আছে। রণবাদ্য, অস্ত্রচালনা, দুঃসাহসিকতা, অদম্য রণোদ্যমের বর্ণনা তিনি এমন খুঁটিনাটি আকারে দিয়েছেন, যা যোদ্ধৃজাতির শিরায় শিরায় রণোন্মাদনা জাগিয়ে তুলতে বাধ্য। গুরু গোবিন্দ সিংহের সমগ্র কাব্য যেন এক গম্ভীর রণদুন্দুভির নিনাদ।
আর, তাঁর দেবী চরিত্র? দেবীর তাত্ত্বিক পরিচয় নিয়ে তিনি খুব বেশি কথা বাড়াননি। তাঁর কাব্যের চণ্ডী এক অসমসাহসিনী মা, উৎপীড়িত সন্তানের বিপদ দূর করতে যিনি বারেবারে রণাঙ্গনে ছুটে যান। মূল দুর্গাসপ্তশতীতে দেবী পরমতত্ত্ব, অসুরদের অস্ত্রাঘাতে তিনি অনাহত ও অচঞ্চল। অন্যদিকে গুরু গোবিন্দের চণ্ডী জগন্মাতা হয়েও অসুরের অস্ত্রাঘাতে বারেবারে আহত হন, রক্তাপ্লুত হন, কিন্তু রণোদ্যম ত্যাগ করেন না। এখানেই চণ্ডীর চরিত্রে দেবীত্বের সঙ্গে লাগে মানবীত্বের স্পর্শ। তিনি যেন আমাদের ঘরের মেয়েটি, যে অসমসাহসী, জীবনযুদ্ধে বারেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়েও যে হার মানতে শেখেনি। গুরু গোবিন্দের চণ্ডী, সেই চিরবিজয়িনী।
Powered by Froala Editor