করোনাকালে দীর্ঘদিন বন্ধ সমস্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। বহুদিন পড়ুয়াদের মুখোমুখি হতে পারেননি অধ্যাপক স্বপন চক্রবর্তী (Swapan Kumar Chakravorty)। আর কোনোদিনই তিনি পড়ুয়াদের মুখোমুখি হবেন না। আজ বিকালেই দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ইংরেজি সাহিত্যের বিশিষ্ট অধ্যাপক। বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই করোনা সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কোভিডেই কেড়ে নিল প্রাণ। বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
কলকাতা বয়েজ স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা স্বপন চক্রবর্তীর। এরপর স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। অক্সফোর্ড থেকে ডি.ফিল ডিগ্রি নিয়ে ফিরে আসেন কলকাতায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপনার শুরু। ১৯৮৫ সাল থেকে একটানা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। ২০০৫ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিভাগীয় প্রধান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেছেন স্বপন চক্রবর্তী। এমনকি কিছু সময়ের জন্য আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসাবেও পড়িয়েছেন। অবসরগ্রহণের পরেও ক্লাসরুমের টান ছাড়তে পারেননি তিনি। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন বিশিষ্ট অধ্যাপক হিসাবে। সবসময় তরুণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মিশে থাকতেন তিনি। বয়সের বেড়াজাল পেরিয়ে তিনি ছাত্রছাত্রীদের বন্ধু হয়ে উঠতে জানতেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি নানা বিষয় নিয়ে লেখালিখিতেও সমান পারদর্শিতা দেখিয়ে গিয়েছেন তিনি। টমাস মিডলটনের নাটক নিয়ে তাঁর লেখা বই ও প্রবন্ধগুলি ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এছাড়া বাঙালির মুদ্রনশিল্পের ইতিহাস, বাঙালির ইংরেজি সাহিত্যচর্চার ইতিহাস বিষয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। বস্তুত বাংলা এবং ইংরেজি সাহিত্যের চর্চার মধ্যে যে প্রাতিষ্ঠানিক দূরত্ব ছিল, তাকেই অস্বীকার করেছিলেন তিনি। একইভাবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের কিউরিয়েটর হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি। অতিমারী পরিস্থিতির আগে পর্যন্ত প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ বছরের ইতিহাসের উপাদান নিয়ে নির্মীয়মাণ মিউজিয়ামেরও কিউরিয়েটরের কাজ করছিলেন তিনি। স্বপন চক্রবর্তীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ তাঁর সমস্ত ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সকলেই।
Powered by Froala Editor