৩৭ বছর পর জেলমুক্ত, ইন্টারনেট-স্মার্টফোনের জগতে ‘নবজাতক’ প্রৌঢ়

বিগত ৩৭ বছর ছিলেন এক ভিন্ন জগতে। কেমন আছে পৃথিবী, কীভাবে বদলাচ্ছে সে— এসব ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ওয়াকিবহাল ছিলেন না তিনি। বা বলা ভালো বহির্বিশ্বের সমস্ত খবরাখবর থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিল তাঁকে। এত বছর পৃথিবীর রাস্তায় পা দিয়ে নিজের চেনা শহরকেই আর চিনতে পারলেন না তিনি। মনে হল যেন ভিনগ্রহের কোনো স্বপ্নরাজ্যেই যেন এসে হাজির হয়েছেন। হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনটাই হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বন্দির ক্ষেত্রে।

আমেরিকার এমনই এক কারাবন্দি রেনল্ড হাডসন। আশির দশকে একদম গোড়ায় কারাগারে বন্দি হয়েছিলেন তিনি। কঠিনতম শাস্তি বরাদ্দ হয় তাঁর জন্য। সম্পূর্ণ যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে। যখন কারাবন্দি হয়েছিলেন তিনি, সেসময় ঘরে ঘরে জায়গা করে নিতে পারেনি কম্পিউটার। ইন্টারনেট কিংবা স্মার্টফোনও যেন কোনো যাদুকরী যন্ত্র। 

২০১৯ সালের শেষের দিকে যখন করোনাভাইরাস ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছিল একের পর এক দেশে, তখনই মার্কিন কারাবন্দিদের মুক্তির দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আইনজীবী মারিয়া বার্নেট। তাঁর সৌজন্যেই ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তি পান মার্কিন কারাবন্দিরা। সেই তালিকায় ছিলেন রেনল্ডও। তবে মাঝের এই চার দশকে পরিপার্শ্ব যে এতটা এগিয়ে যাবে, তা একেবারেই আশা করেননি তিনি।

সেপ্টেম্বর মাসে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর রেনল্ড রয়েছেন বাড়িতেই। তবে কিছুতেই মানিয়ে উঠতে পারছেন না প্রযুক্তি আর বৈদ্যুতিন যন্ত্রে মুড়ে থাকা এই জীবনকে। প্রতি পদক্ষেপেই তাঁকে সাহায্য নিতে হচ্ছে পরিবারের। টেলিভিশন, স্মার্টফোন, রেফ্রিজারেটর, ইন্টারনেট— এসব কিছুরই ব্যবহারের সঙ্গে সড়গড় হয়ে উঠতে পারেননি তিনি।

আরও পড়ুন
সিডি, ক্যাসেট, পোর্টেবল রেকর্ডারের উদ্ভাবক তিনি; প্রয়াত ডাচ প্রযুক্তিবিদ লু অটেন্স

রেনল্ডের ভাষায় এই জগত যেন স্বপ্নের মতো। তবে পরিবারের প্রাপ্তবয়স্কদের থেকেও তরুণ-তরুণী কিংবা কিশোররা এ বিষয়ে তাঁকে সম্পূর্ণভাবে ‘গাইড’ করে চলেছে বলেই জানাচ্ছেন তিনি। তাই দিচ্ছে এই প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে ওঠার পাঠক্রম। রেনল্ডের অভিমত, শুধু পরিপার্শ্বই ‘স্মার্ট’ হয়নি বরং বুদ্ধিমত্তার নিরিখে এই প্রজন্মের কিশোর কিশোরীরাও ছাপিয়ে গেছে পূর্ব প্রজন্মকে।

আজকে স্মার্টফোন বা প্রযুক্তি ছাড়া দিনযাপনের কথা ভাবাটাই অসম্ভব আমাদের কাছে। প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তি বাজারে আসার অপেক্ষায় বসে থাকি আমরা। কিন্তু এই বিবর্তনের হার যে কত দ্রুত— সে কথা সত্যিই ক’জন ভেবে দেখেছি? আজ না হোক কাল রেনল্ডের মতো মানুষরাও ঠিক শিখে নিতে পারবেন এই নতুনমাত্রার যাপনচিত্র। আর হঠাৎ করেই যদি আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় রেনল্ডের সময়ে? আমরা দিন গুজরান করতে পারব কি খানিকটা হলেও? গ্যাজেট-নির্ভরতা আমাদের সামনে তুলে আনছে এই প্রশ্নই…

আরও পড়ুন
প্রযুক্তির ব্যবহারে সংকটে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা

Powered by Froala Editor