ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডের বাইরে বেশ বড়ো দ্বীপ কর্সিকা। এই অঞ্চলের সঙ্গে বাকি ইউরোপের যোগাযোগ থাকত না প্রায়ই। ‘কর্সিকায় যা ঘটে তা কর্সিকাতেই থাকে’ এমনটা তো প্রবাদই আছে। ফলে এই দ্বীপের মধ্যে যে কত হারিয়ে যাওয়া সম্পদ আছে, তার কোনো হিসাব নেই। আর সম্প্রতি এখানেই পাওয়া গেল স্যার আইজ্যাক নিউটনের যুগান্তকারী বইয়ের প্রথম সংস্করণ। ‘ফিলজফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথেমেটিকা’ বা সংক্ষেপে ‘প্রিন্সিপিয়া’। এই বইতেই লেখা নিউটনের যাবতীয় সূত্র। তার মধ্যে যেমন আছে মহাকর্ষসূত্র, গতিসূত্র তেমনই আছে ক্যালকুলাস বা আলোকবিজ্ঞানের নানা সূত্র। ১৬৮৭ সালে প্রকাশিত হয় ল্যাটিন ভাষার প্রথম সংস্করণ। প্রথম সংস্করণের খুব কম বইই আর পাওয়া যায়। আর বাজারে সেগুলোরও চাহিদা প্রচুর।
আরও পড়ুন
কোরান নয়, অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন মসজিদে লুকিয়ে আছে বাংলা কবিতার বই!
কর্সিকার এই লাইব্রেরি ছিল একটি ব্যক্তিগত লাইব্রেরি। লেপোলিয়ান বোনাপার্টের ভাই ভাই লুই বোনাপার্ট তখন করসিকাতে থাকতেন। তাঁর জন্যই তৈরি হয়েছিল এই লাইব্রেরি। তারপর এখন আর সেই ফ্রান্সও নেই, সেই নেপোলিয়ানও নেই। অতএব সেই ব্যক্তিগত লাইব্রেরিই এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। তাই লাইব্রেরির কিউরিয়েটর হয়ে এলেন ভানিনা শিরিন্সকাই শিকমাটফ। আর এসেই খুঁজে পেয়ে গেলেন এক গোপন রত্ন। ‘প্রিন্সিপিয়া’র প্রথম সংস্করণের একটি বই। প্রথমে ভানিনা পাতা উলটে দেখছিলেন লাইব্রেরির মধ্যে কী কী বই আছে। আর তখনই খুঁজে পেয়ে গেলেন লুই বোনাপার্টের নিজের হাতে লেখা ‘প্রিন্সিপিয়া’র নাম। খুঁজে পেতে বেশি সমস্যা হল না। দেখা গেল বইটির কভার একটু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভিতরে সমস্ত পাতাই অক্ষত আছে। ভানিনার এই অনুসন্ধান রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে।
আরও পড়ুন
পেরিয়েছে ১৭৫ বছর, আজও স্বমহিমায় ভারতের প্রাচীনতম বইয়ের দোকান
‘প্রিন্সিপিয়া’র প্রথম সংস্করণ আর পাওয়া যায় না বললেই চলে। ২০১৬ সালে এরকম একটি বই নিলামে উঠেছিল। তখন তার দাম ছিল ৩.৭ মিলিয়ন ডলার। বিজ্ঞানের বই এত দামে আর কখনও বিক্রি হয়নি। হবে নাই বা কেন? এ যে স্যার নিউটনের সারা জীবনের কাজের দলিল। কর্সিকাতে খুঁজে পাওয়া গেল সেই বিরল সংস্করণের আরেকটি বই। লাইব্রেরিতে মোট বইয়ের সংখ্যা ৫০,০০০। এখন সেই বিপুল সংগ্রহ থেকে আর কী কী খুঁজে পাওয়া যায়, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই।