বর্ণবিদ্বেষ, জাতিবিদ্বেষের দীর্ঘ ইতিহাস পেরিয়ে আমরা আজ বিশ্বায়িত পৃথিবীতে পা রেখেছি। তবুও বোধহয় সেই অন্ধকার ইতিহাসকে পুরোপুরি পিছনে ফেলে আসতে পারিনি। আজও বহু মানুষের মনের অগোচরে থেকে গিয়েছে সেই পুরনো ঘৃণা। আর তাই বোধহয় প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভ্যালিডিক্টোরিয়ানের নাম উঠে আসতে অপেক্ষা করতে হল ২০২০ সাল পর্যন্ত।
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির দীর্ঘ ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে তার সমাবর্তন অনুষ্ঠান। আর এই অনুষ্ঠানে বিদায়ী শিক্ষাবর্ষের পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে একজন একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। সেই পড়ুয়াকেই বলা হয় ভ্যালিডিক্টোরিয়ান। তবে এতদিন এই তালিকায় সমস্ত নামই ছিল শ্বেতাঙ্গ পড়ুয়াদের। তবে ২০২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক স্তরের পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে এই বক্তৃতা দেবেন নিকোলাস জনসন। কানাডার অধিবাসী নিকোলাস প্রিন্সটনের ইতিহাসে তাই একটি উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে থেকে যাবেন।
অপারেশন রিসার্চ এবং ফাইন্যান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন কৃতি ছাত্র নিকোলাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই সে যুক্ত থেকেছে একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণার সঙ্গে। গুগলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য কাজ করেছেন তিনি। এবার স্নাতক স্তরের পড়াশুনো শেষ করে সে উচ্চশিক্ষার জন্য যাবেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে। তবে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির দিনগুলি তার চিরকাল মনে থেকে যাবে, জানিয়েছেন নিকোলাস। এখানেই কত রাত জেগে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনায় কাটিয়েছেন তিনি। আলোচনা চলেছে দুই ভিন্ন সংস্কৃতির পারস্পরিক যোগাযোগ নিয়েও। আর এইসব আলোচনাই হয়তো ভবিষ্যতের বৃহত্তর ঐক্যের সম্ভবনা গড়ে তুলবে।
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইতিহাসে ২০২০ সাল তাই একটা মাইল ফলক। এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যযুগের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ক্রীতদাস প্রথার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। সেই অন্ধকার সময়ের স্মৃতি আজ হয়তো অনেকটাই ম্লান। তবে নিকোলাসের এই স্বীকৃতি যেন ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমানের একটি স্থায়ী বিচ্ছেদ ঘটাল। অবশ্য এ-বছর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবর্তন হবে না। বদলে পুরোটাই হবে অনলাইনে। আর ৩১ মে তারিখে সেই অনলাইন অনুষ্ঠানে নিজের বক্তৃতা উপস্থাপন করবেন নিকোলাস। সেইসঙ্গে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি সাক্ষী থাকবে আরেকটি ইতিহাসের।