পুরুষ নারী সমান সমান— এই শ্লোগান এখন সর্বত্র উঠছে। সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রে মেয়েরা নিজেদের চিনিয়ে দিচ্ছে। তবে সেই পরম্পরা শুধু কি আজকের? পিতৃতন্ত্রের ধ্বজাধারীরা যখনই দমিয়ে রাখতে চেয়েছে মেয়েদের, তখনই বেরিয়ে এসেছেন তাঁরা। অন্তত ইতিহাস তো তাই বলে। যে কলমের মাধ্যমে বহু যুগ ধরে সমাজের নানা দিক দেখিয়ে এসেছি আমরা, সেই কলম কিন্তু প্রথম তুলে নিয়েছিলেন এক নারী। লিখেছিলেন নিজের লেখা। তিনি, এনহেদুয়ান্না। বিশ্বের প্রথম লেখক।
খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০ অব্দের ঘটনা। প্রথম যুগের সভ্যতার ধারা তখন দেখছে পৃথিবী। সেইরকমই একটি বিখ্যাত সভ্যতা সুমেরীয় সভ্যতা। যার কথা ইতিহাস বইতে আমরা বহু পড়েছি। সেই সময়েরই একজন রাজকন্যা ছিলেন এনহেদুয়ান্না। প্রাচীন আক্কাদ দেশের রাজা প্রথম সারগনের কন্যা তিনি। তবে শুধু রাজকন্যাই নন, সেই সময় প্রধান পুরোহিত ছিলেন তিনি। মূলত সুমেরীয়’র চাঁদের দেবী নান্না এবং যুদ্ধের দেবী ইনান্নার উপাসক ছিলেন তিনি। তাঁর নামের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন এই দুই দেবী। মনে রাখতে হবে, সেই সময় এনহেদুয়ান্নার আগে কোনো নারী প্রধান পুরোহিত হননি। শুধু রাজপরিবারে জন্ম নেওয়ার জন্যই নয়, নিজের যোগ্যতা দিয়েই এই পদ পেয়েছিলেন তিনি। সারগনেরও সম্পূর্ণ ভরসা ছিল তাঁর ওপর।
১৯২৭ সালে ব্রিটিশ পুরাতত্ত্ববিদ স্যার লিওনার্ড উলি সুমেরের ‘আর’ শহরে খননকার্যের সময় কিছু মন্দিরের সন্ধান পান। সেখানেই উল্লেখ ছিল এনহেদুয়ান্নার। শুধু সেটাই ছিল না। পাথরের গায়ে খোদাই ছিল বেশ কিছু কবিতা। যেগুলোর নিচে এনহেদুয়ান্নার স্বাক্ষরও ছিল। সেই প্রথম বিশ্ব পেল তার প্রাচীনতম লেখককে। পরবর্তীকালে সব মিলিয়ে ৪২টা মন্ত্র লিখেছিলেন এনহেদুয়ান্না। সবকটিই নান্না এবং ইনান্না-কে উদ্দেশ্য করে লেখা। এখনও সযত্নে রক্ষিত আছে সেগুলো।
আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে একজন নারীর কাছ থেকেই প্রথম লেখনী পেয়েছিল বিশ্ব। উপলক্ষ আর সংখ্যা যাই হোক না কেন, সেটা তো নিজের তাগিদ থেকেই লিখেছিলেন এনহেদুয়ান্না। ২০১৫ সালে তাঁকে সম্মান জানিয়ে বুধ গ্রহের একটি গহ্বরের নাম রাখা হয় ‘এনহেদুয়ান্না’। সম্মান দিচ্ছি আমরাও। বিশ্বের প্রথম মহিলা লেখককে।