এতকাল চোখে জল এসেছে পেঁয়াজের ঝাঁঝে। এবার দামের চোটে চোখে সর্ষেফুল দেখছে বাঙালি। গত কয়েক দিনে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে কার্যত দিশেহারা ভোজনরসিক মধ্যবিত্ত। দামে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে ইতিমধ্যেই। ফলে সন্ধেবেলার আড্ডা থেকে মুখ লুকিয়েছে আসর জমানো পেঁয়াজিও।
কমবেশি গোটা ভারতের চেহারাই কার্যত এক। রাজধানীতেও একই পরিস্থিতি। মহারাষ্ট্রের নাসিক, কোলাপুর,অন্ধ্রের কুরনুল থেকেই সাধারণত দেশের সর্বত্র পেঁয়াজ পৌঁছে যায়। এবছর কিছু জায়গায় ভয়াবহ বন্যা, বর্ষার খামখেয়ালিপনা, সময়ের হেরফেরে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়াতেও বহু পেঁয়াজ নষ্ট হয়। দাম চড়ছিল অনেক দিন ধরেই। পুজোর মাস কোনোভাবে কেটে গেলেও, বিয়ের মরশুম শুরুর মুখে নাভিশ্বাস উঠেছে বাজারে।
সব মিলিয়ে, থলে হাতে বাজার ফেরত বাঙালির কপালে ভাঁজ পড়েছে যথেষ্টই। বিপাকে সরকারও। কার্যত আগুন বাজারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার রেশন দোকানগুলি থেকে পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমে কলকাতা দিয়ে শুরু হলেও, আস্তে আস্তে রাজ্যের সব জায়গায় এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর খাদ্য দপ্তর। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানা গেছে, পেঁয়াজের যোগান বাড়াতে ইরান, আফগানিস্তানের মতো কয়েকটি দেশের শরণাপন্ন হয়েছে ভারত।
এতকিছুর জেরেই রাতারাতি রোল থেকে উবে গেছে পেঁয়াজ, চপের দোকানে দেখা মিলছে না পেঁয়াজির। পাওয়া গেলেও, বাজার দরের সঙ্গে দামও বেড়েছে তার। উত্তর কলকাতার বিখ্যাত ‘লক্ষী নারায়ণ সাউ এন্ড সন্স’-এ গিয়ে জানা গেল, পেঁয়াজির চাহিদা কমেনি মোটেই। বরং জোগানে টান পড়েছে। ১লা ডিসেম্বর থেকে তাঁরাও ১ টাকা বাড়িয়েছেন পেঁয়াজির দাম। এখন এক-একতা পেঁয়াজি ৮ টাকা করে। প্রায় তিন প্রজন্মের এই দোকানের কর্ণধারের মুখে ধরা পড়ে অসহায়তার ছবি।
অবশ্য সর্বত্রই একই ছবি। শিয়ালদহে পেঁয়াজির ভিতর পুড়ে দেওয়া হচ্ছে বাঁধাকপির কুচি। দাম ওই ৭-৮-এই ঘোরাফেরা করছে। এই দুর্দিনে এক ধাপ উঠে ধর্মতলা-চাঁদনি চত্ত্বরে পেঁয়াজির দাম ১০টাকা। তবু বিক্রিতে ভাঁটা নেই এই অফিসপাড়াতে। দেদার বিকোচ্ছে বেশি দামেই।
তবে পেঁয়াজির বিক্রি যেমনই হোক না কেন, দোকানিদের কপালের চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট। এই অবস্থা বজায় থাকবে কতদিন, তাও অজানা। দাম কমলে কি ফের কমানো হবে পেঁয়াজির দাম? এই প্রশ্নের উত্তরে মৃদু হেসে দোকানির জবাব, 'আগে তো কমুক'!