রাষ্ট্রীয় কামধেনু আয়োগ আয়োজিত গো-বিজ্ঞান পরীক্ষাকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সারা দেশ জুড়েই। আর সেই বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়ে পড়ুয়াদের এই পরীক্ষায় উৎসাহ দেবার নির্দেশ পাঠিয়েছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ইউজিসি-র এই নির্দেশিকার বিরোধিতা করে এবারের সরাসরি আন্দোলনের পথ বেছে নিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। বুধবার দিনভর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখায় প্রেসিডেন্সির ছাত্রছাত্রী মঞ্চ ইন্ডেপেন্ডেন্টস’ কনসলিডেশন।
ইন্ডেপেন্ডেন্টস’ কনসলিডেশনের দাবি, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ কমিয়ে নানা ধরণের অপবিজ্ঞানের চর্চা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের ছাত্রছাত্রী সমাজ বারবার তার বিরোধিতা করে পথে নেমেছে। তবে এবার সরাসরি মুক্তচিন্তার বাতাবরণকে মুছে ফেলে অপবিজ্ঞান চর্চায় উদ্যোগী সরকার। এমন ঘটনা সত্যিই নজিরবিহীন। প্রেসিডেন্সির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আসিফ আবদুল্লার কথায়, “এই আপাত নিরীহ একটি পরীক্ষার মধ্যেই আছে বৈজ্ঞানিক চিন্তাকে মুছে ফেলার স্পষ্ট উদ্দেশ্য। তাই বিষয়টিকে একেবারেই হেলাফেলার চোখে দেখা উচিৎ হবে না।” ইউজিসি-র নির্দেশ যাতে প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের উপর বলবৎ না হয়, এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে তারা দাবিপত্রও পেশ করে।
বাংলার সংস্কৃতি ও কৃষ্টির চর্চায় বরাবর মানমন্দিরের ভূমিকা পালন করে এসেছে তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজ। ‘হিন্দু কলেজ’ নাম থাকাকালীন ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের যে ঢেউ উঠেছিল, তা দেশে যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ভিত রচনা করেছিল অনেকটাই। পরবর্তীকালে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহার মতো বিজ্ঞানীর হাত ধরে সেই ভিত আরও পোক্ত হয়েছে। এই সমস্ত ঐতিহ্য মুছে ফেলে প্রেসিডেন্সিকে অপবিজ্ঞান চর্চার আখড়া করে তোলা যাবে না বলেই দাবি ইন্ডেপেন্ডেন্টস’ কনসলিডেশনের।
আসিফ আবদুল্লা জানালেন, “ডিন অফ স্টুডেন্সটসের কাছে আমরা দাবিপত্র নিয়ে গেলে তিনি প্রথমেই তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। এমনকি এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার কোনো প্রয়োজন নেই বলেও জানান তিনি। অবশেষে দাবিপত্র গ্রহণ করা হলেও তা যথেষ্ট তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই দেখছে কর্তৃপক্ষ। দুদিন পেরিয়ে গেলেও আমরা এবিষয়ে কোনো উত্তর পাইনি।” তবে তাঁর আশঙ্কা, “এর আগে ইউজিসি-র নির্দেশ বলে বেশ কিছু শিক্ষাবিরোধী নীতি পড়ুয়াদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রেও হয়তো তেমনই কিছু ঘটতে চলেছে।” তবে নিয়মমাফিক ইউজিসি-র যেকোনো নির্দেশ অমান্য অরার স্বাতন্ত্র্য কর্তৃপক্ষের আছে। তাই প্রেসিডেন্সির ঐতিহ্য তথা শিক্ষাক্ষেত্রে যুক্তিবাদী পরিসরকে বাঁচিয়ে রাখতে কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রত্যেককেই এগিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছে ইন্ডেপেন্ডেন্টস’ কনসলিডেশন।
আরও পড়ুন
অবসরেও ঘরবন্দি নন; টানা দু-দশক বিনা পারিশ্রমিকেই প্রেসিডেন্সিতে ক্লাস নিয়েছেন অধ্যাপিকা নন্দিনী রাহা
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রীয় কামধেনু আয়োগের বক্তব্য অনুযায়ী দেশজুড়ে গবাদি পশু সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের পাশাপাশি অংশ নিতে পারবেন সাধারণ মানুষও। তবে তার পাঠ্যবস্তুর মধ্যে থাকা বেশ কিছু উপাদান বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। দেশি গরুর দুধে সোনা আছে, বা গো-মূত্র নানা মারণ ব্যাধির মহৌষধ; এমনই সব দাবি করা হয়েছে সেখানে। গত বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষার দিন নির্ধারিত হলেও বিতর্কের মুখে তা পিছিয়ে গিয়েছে। তবে দেশজুড়ে এই অবৈজ্ঞানিক পরীক্ষা বাতিল করারও দাবি জানিয়েছে ইন্ডেপেন্ডেন্টস’ কনসলিডেশন।
আরও পড়ুন
ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অজস্র ইতিহাস, তিলে-তিলে আর্কাইভ গড়ে তুলছেন প্রেসিডেন্সির পড়ুয়ারা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রেসিডেন্সিতে ‘রেকি করতে’ আচমকা ঢুকলেন সুশান্ত, আড্ডা জমালেন হোস্টেলের ঘরে বসে