সাড়ে তিন দশক আগের ক্ষত এখনও দগদগে হয়ে রয়েছে ইউক্রেনের বুকে। চের্নোবিল। ১৯৮৬ সালে ২৬ এপ্রিল এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল ইউক্রেনের এই নগরী। পারমাণবিক দুর্ঘটনার জেরে রাতারাতি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল চের্নোবিল (Chernobyl)। এবার ৩৬ বছর পর ফের মানুষের আনাগোনায় প্রাণস্পন্দন ফিরল বেলারুশের সীমান্তবর্তী এই শহরে। না, আশার নয়, বরং তাতে আশঙ্কিত ইউক্রেন (Ukraine) প্রশাসন।
সাধারণ মানুষ নয়, ইউক্রেনের এই ঘোস্ট টাউনে বর্তমানে জায়গা নিয়েছে সেনা বাহিনী। চের্নোবিলের এক্সক্লুশন জোনেই চলছে যুদ্ধের মহড়া। আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে ইউক্রেনের ক্রেমিয়া দখল করে রাশিয়া। তারপর রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পূর্ব ইউক্রেনের একটি অংশের দখল নেয়। চের্নোবিলের পরিত্যক্ত মাটিতে যুদ্ধের মহড়া তাদেরই। তবে তাতে সম্পূর্ণ মদত রয়েছে ক্রেমলিনের। এমনই তথ্য উঠে আসছে ইউক্রেনের ইন্টেলিজেন্স সংস্থার হাত ধরে। সেইসঙ্গে স্যাটালাইট চিত্রও ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পিছন থেকে ‘ব্যাক আপ’ দিচ্ছে রুশ বাহিনী।
বিগত কয়েক মাস ধরেই বেলারুশ সীমান্তে ক্রমশ সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছিল রাশিয়া। জানুয়ারির শুরুর দিকে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল ৫ হাজার রুশ সৈনিক। আজ সেই সংখ্যাটা পৌঁছেছে ৩০ হাজারে। যা বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। চের্নোবিলের নিকটবর্তী সীমান্তে সার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সেনা ছাউনি। স্নাইপার, মর্টার, ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রও তৈরি রাখা হয়েছে বেলারুশ-ইউক্রেন সীমান্তে। যুদ্ধের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি যাকে বলে। যদিও এসব তথ্য এখনও অস্বীকার করে চলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তবে প্রশ্ন থেকে যায় চের্নোবিলই কেন? প্রথমত, পরিত্যক্ত শহর হওয়ায় সেখানে ইউক্রেন কিংবা ন্যাটো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করবে না— সেটা এক প্রকার নিশ্চিত। পাশাপাশি ভৌগলিকভাবেও চের্নোবিল একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। সেখান থেকে ইউক্রেন রাজধানী কিয়েভের দূরত্ব মাত্র দেড়শো কিলোমিটার। কাজেই সরাসরি রাজধানীতে আক্রমণ চালানোর জন্য উপযুক্ত অঞ্চল চের্নোবিল।
আরও পড়ুন
নোবেলজয়ের দিনেই দেশের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ‘দেশদ্রোহিতা’র অভিযোগ রাশিয়ার
অবশ্য ইউক্রেনের আধিকারিকরা আরও বেশি করে আশঙ্কিত অন্য একটি বিষয়ে। রাশিয়া ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যুদ্ধে সরাসরি ব্যবহার করবে না তো ইউক্রেনকে? তেমনটাই আশঙ্কা করছেন অনেকে। চের্নোবিলের ভ্লাদিমির লেনিন পাওয়ার প্ল্যান্টের ‘ক্ষতস্থান’ ধাতুর মোড়কে মুড়ে ফেললেও, তার ভেতরে আজও জেগে রয়েছে ‘অগ্নিকুণ্ড’ তথা পারমাণবিক বর্জ্য। যা উন্মুক্ত হলে আবারও ধ্বংসলীলা চলতে পারে গোটা ইউরোপ জুড়ে। সেটাকেই হাতিয়ার করে নেবে না তো রাশিয়া? উঠছে এই প্রশ্নই।
আরও পড়ুন
গোপন সেনাবাহিনী রয়েছে রাশিয়ার, পরিত্যক্ত ট্যাবলেটের সাহায্যে রহস্য ফাঁস
সরকারি নথি অনুযায়ী, চের্নোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন মাত্র ৩১ জন। তবে বেসরকারি রিপোর্টের মতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাটা কোনোভাবেই ২ লক্ষের কম নয়। পাশাপাশি ইউক্রেনের সীমান্ত ছাড়িয়ে তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা ইউরোপজুড়েই। আবার সেই পারমাণবিক অগ্নিকুণ্ডকে জাগিয়ে তুললে বিভীষিকার মেঘ ঘনাবে ইউরোপে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…
আরও পড়ুন
ছেড়ে গেছে অধিকাংশ মানুষ, মৃত্যুর অপেক্ষায় রাশিয়ার এই শহর
Powered by Froala Editor