আবারো পশুদের প্রতি নৃশংসতার দৃশ্য ফুটে উঠল। অমানবিকভাবে হত্যা করা হল একটি হাতিকে। আনারসের ভেতরে বাজি ও বারুদ ভরে তা খাওয়ানো হল হাতিটিকে। মুখের মধ্যেই বিস্ফোরণ হয়ে ভয়ঙ্কর রকম আহত হয় হাতিটি। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতেই সন্ধেবেলায় মারা যায় প্রাণীটি। ঘটনাটি ঘটেছে কেরালার মালাপ্পুরম জেলার একটি গ্রামে।
কেরালার বন দফতর বিভাগের এক আধিকারিক মোহন কৃষ্ণন, হাতিটির ছবি ও ঘটনার বিবরণ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করায় সামনে আসে এই নৃশংসতার ছবি। তিনি জানান নিকটবর্তী বনভূমি থেকে ওই গ্রামে হাতির অনুপ্রবেশ নতুন কিছুই না। এদিনও গ্রামে চলে এসেছিল হাতিটি। আঞ্চলিক গ্রামবাসীদের মধ্যে কেউ বারুদ-ভর্তি ওই আনারস প্রদান করে হাতিটিকে। ক্ষুধার্ত পশুটি স্বাভাবিকভাবেই আন্দাজ করতে পারেনি বিপত্তির গন্ধ। বাজির বিস্ফোরণ ঘটে হাতিটির মুখের মধ্যেই। ভয়ঙ্কররকম জখম হয় জিভ ও মুখের ভিতরের অংশ। অসহ্য যন্ত্রণায় সে ছুটতে থাকে গ্রামের রাস্তা দিয়ে। শেষে নিকটবর্তী ভেলিয়ার নদীতে নেমে দাঁড়িয়ে থাকে দীর্ঘক্ষণ। কিন্তু এতকিছুর পরেও একজনকেও আহত করেনি সে। কোনোরকম ক্ষতি করেনি গ্রামের কোনো বাড়ির, গাছপালা বা বাগানের।
মোহন কৃষ্ণন জানান, যন্ত্রণা লাঘব করার শেষ চেষ্টা করেছিল হাতিটি। জলে শুঁড় ও মুখ ডুবিয়ে রেখেছিল যাতে কোনোভাবে সংক্রমণ না হয়, তার জন্য। বিকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বন দফতরের কর্মীরা। বন দফতর আধিকারিকদের দুটি পোষ্য হাতির সাহায্যে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয় তাকে। কিন্তু সাহায্যের জন্য নিজেই উঠে আসে সে। হয়তো বা সে বুঝে গিয়েছিল সময় ফুরিয়ে এসেছে তার। বিকাল ৪টে নাগাদ মারা যায় হাতিটি।
হাতিটির পোস্টমর্টেম রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, একটি না; দু-দুটি প্রাণ শেষ হয়ে গেছে এই নৃশংসতায়। হাতিটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। ১৮ মাসের মধ্যেই সন্তান প্রসব করত সে। কিন্তু মানুষের বর্বরতা পৃথিবীর আলো দেখতে দিল না তার শাবকটিকেও। তাকে শেষ বিদায় জানাতে বনকর্মীরা লরি করেই নিয়ে যান জঙ্গলে। যেখানে তার বেড়ে ওঠা সেই অরণ্যেই দাহ করা হয় মৃতদেহ। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড আরো একবার মনে করিয়ে দিল বিবর্তিত হলেও, আমরা ঝেড়ে ফেলতে পারিনি আদিম প্রবৃত্তি। বিকৃত সেই মানসিকতাই এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি প্রতিদিন।
ছবি- মোহন কৃষ্ণন
Powered by Froala Editor