“১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের টিকাকরণ শুরু হয়ে গেছে আমাদের দেশে। কিন্তু যারা স্কুলে পড়ে বা ইনস্টিটিউশনাল সাপোর্টের মধ্যে আছে তারাই কেবল এই পরিষেবা পাচ্ছে।”
বলছিলেন কলকাতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রান্তকথার কর্ণধার বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়। হ্যাঁ, সরকারের অনূর্ধ্ব-১৮ টিকাকরণ প্রকল্পের মধ্যেও রয়ে গেছে বড়োসড় গলদ। আর সেই দিকটাই তুলে ধরছিলেন বাপ্পাদিত্য। দু’বছর হতে চলল দেশজুড়ে অব্যাহত কোভিডের প্রকোপ। আর এই মহামারীর আবহে বদলে গেছে অসংখ্য শিশুর স্বাভাবিক যাপনচিত্র। স্কুলছুট হয়েছে অনেকেই। কেউ আবার মহামারীতে হারিয়েছে বাবা-মা দু’জনকেই। তা ছাড়াও পথশিশুর সংখ্যাও নেহাত যে কম নয়। কিন্তু তাদের কথা কি আদৌ মনে রাখা হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সীদের টিকাকরণ প্রকল্পে?
না, তারা থেকে গেছে বাদের খাতাতেই। এবার এইসব পথশিশুদের টিকাকরণের আয়োজন করল প্রান্তকথা। অভিনব এই উদ্যোগের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতাল এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনও। প্রতিবছর স্বামীজির জন্মদিন পালিত হয় যুব দিবস হিসাবে। আগামী ১২ তারিখ, যুব দিবসের দিনই কলকাতার বুকে পিয়ারলেস হাসপাতালে শুরু হতে চলেছে এই টিকাকরণ কর্মসূচি। প্রাথমিকভাবে ১২ জন শিশুকে টিকা দিয়ে শুরু হবে জয়যাত্রা। পরবর্তীতে সব মিলিয়ে ১০০ জন পথশিশুকে কোভিডের টিকা দেবে প্রান্তকথা। বাপ্পাদিত্য জানালেন, “প্রান্তকথা মূলত প্রান্তিক মানুষদের নিয়েই কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রেও কলকাতার বিভিন্ন বস্তি এবং পথশিশুদেরই প্রাধান্য দিচ্ছি আমরা।” এই উদ্যোগ যে কতটা জরুরি তা ফুটে উঠল পিয়ারলেস হাসপাতালের চিকিৎসক তথা ভ্যাকসিন ট্রায়াল বিশেষজ্ঞ ডঃ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিকের কথায়, “এই মহামারী দেখিয়ে দিয়েছে, যতক্ষণ না প্রত্যেকের ভ্যাকসিনেশন হচ্ছে ততক্ষণ আমরা কেউই নিরাপদ নই। একটা গোষ্ঠীকেই শুধু সুরক্ষিত রাখলে, আরেকটা গ্রুপ থেকে সংক্রমণ তো ছড়াবেই।”
তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল, এই টিকাকরণ কর্মসূচি পুরোটাই পরিচালিত হচ্ছে যুব সম্প্রদায়ের মাধ্যমে। বাপ্পাদিত্যের কথায়, এই কর্মযজ্ঞ ‘বাই দ্য ইয়ুথ, ফর দ্য ইয়ুথ’। হ্যাঁ, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণ-তরুণীরাই ক্রাউডফান্ডিং-এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছে এই টিকাকরণের জন্য। কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবকও তাঁরাই। পাশাপাশি পিয়ারলেস হাসপাতালেও ভূমিকাও অনস্বীকার্য। টিকাকরণ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জড়িয়ে রয়েছে তো বটেই, পাশাপাশি টিকার দামের ক্ষেত্রেও বেশ খানিকটা বাড়তি ভর্তুকি দিচ্ছে হাসপাতাল। ডঃ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক জানালেন, “গরীব এবং প্রান্তিক মানুষদের জন্য পিয়ারলেস দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে আসছে রামকৃষ্ণমিশনের সঙ্গে। সেই চিন্তাভাবনা নিয়েই প্রান্তকথার এই প্রয়াসে হাত মিলিয়েছি।”
আরও পড়ুন
বস্তিজীবনের পাশাপাশি পরিবেশ বাঁচাতেও লড়ছেন কলকাতার যুবক
সম্প্রতি ওমিক্রনের তাণ্ডবে গোটা দেশজুড়ে আবার ফিরেছে কোভিড আতঙ্ক। সংক্রমণের মাত্রাও ঊর্ধ্বমুখী। অথচ এখনও পর্যন্ত বাংলার বহু মানুষই দুটি টিকা পাননি কোভিডের। যার মধ্যে রয়েছে লক্ষাধিক পথশিশু। এমন সংকটকালীন সময়ে দাঁড়িয়ে প্রান্তকথার হাত ধরে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে চলেছে তিলোত্তমা…
আরও পড়ুন
কলকাতায় ছোটো সিনেমার আসরে সেরা সৌম্যদীপের 'এলএসসি'
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরুদ্ধে লড়াই, কলকাতার ফুটপাথই গ্যালারি ‘ছবিওয়ালা’-র