৬০০০ মিটারের চেয়ে বেশি উঁচু কোনো পর্বতের শৃঙ্গে পা দেওয়া সহজ কাজ নয়। যথেষ্ট শারীরিক শক্তি না থাকলে এমন অভিযান কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর ঋতুস্রাবের সময়ে এমন অভিযানের কথা তো কেউ কল্পনাও করতে পারেন না। তবে এই অকল্পনীয় ঘটনাকেই বাস্তব করে তুলেছেন দিল্লির ট্রাভেল ভ্লগার প্রকৃতি বর্ষনৈ (Prakriti Varshney)। ঋতুস্রাবের যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করেই নেপালের ৬৮১২ মিটার উঁচু মাউন্ট আমা দাবলাম (Mt Ama Dablam) জয় করলেন তিনি। অবশ্য এমন বিরল রেকর্ড তৈরি করার কোনো পরিকল্পনা তাঁর ছিল না। ঘটনাচক্রে ঘটিয়ে ফেলেছেন অঘটন। আর তারপর নিজেও নিজের সামর্থ্যকে নতুন করে চিনতে পেরেছেন। পাশাপাশি তাঁর এই সাফল্য ঋতুস্রাব সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা ভাঙতে সফল হবে বলেও বিশ্বাস করেন তিনি।
সামাজিক মাধ্যমে যথেষ্ট জনপ্রিয় ট্রাভেল ভ্লগার প্রকৃতি বর্ষনৈ। মাঝে মাঝেই তাঁকে দেখা যায় নানা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতে। কখনও একা জিপ চালিয়ে পৌঁছে যান প্রান্তিক কোনো গ্রামে। আবার কখনও দুর্গম পাহাড়ি উপত্যকা দিয়ে ট্রেক করতে দেখা যায় তাঁকে। করোনা অতিমারীর আগে তাঁর স্পিতি ভ্যালি ভ্রমণের ভিডিও যথেষ্ট ভাইরাল হয়ে উঠেছিল। তবে এই প্রথম কোনো উঁচু পর্বতশৃঙ্গে আরোহণ করলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই মাউন্ট আমা দাবলাম জয় করার স্বপ্ন দেখতেন প্রকৃতি। তবে তখনও তিনি ভাবতে পারেননি, এই যাত্রায় প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা ছাড়াও আরও কোনো প্রতিকূলতা এসে হাজির হবে।
সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে বেসক্যাম্প ছেড়ে রওয়ানা হয়েছিলেন প্রকৃতি এবং তাঁর শেরপা। কিন্তু ঘড়িতে ১টা বাজতেই শারীরিক অস্বস্তি শুরু হয়। প্রথমে তিনি মনে করেছিলেন, জলের অভাবে বুঝি অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারেন, জলের অভাব নয়, তাঁর ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে। কোমরের নিচ থেকে দুটি পা ক্রমশ অলস হয়ে আসছে। যাত্রা অসম্পূর্ণ রেখেই ফিরে যেতে চেয়েছিলেন প্রকৃতি। তবে তাঁর শেরপা সাহস জুগিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত একটু বিশ্রাম নিয়ে আবারও যাত্রা শুরু করলেন তিনি। এরপর প্রায় ১৬ ঘণ্টা যাত্রার পর অবশেষে পৌঁছলেন আমা দাবলামের চূড়ায়। একেবারে কাছ থেকে দেখলেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টকে। এই দৃশ্যের কাছে যেন হারিয়েই গেল সমস্ত শারীরিক যন্ত্রণা।
প্রকৃতি জানিয়েছেন, তাঁর পরিচিত অনেককে ঋতুস্রাবের সময় কষ্ট পেতে দেখলেও তাঁর নিজের কখনও তেমন কষ্ট হয়নি। তবে এবারের অভিযানের সময় যথেষ্ট কষ্ট পেয়েছেন তিনি। কিন্তু মনের জোর থাকলে কোনোকিছুই অসম্ভব নয়। প্রকৃতির এই অভিযান সেটাই প্রমাণ করল আবার। মহিলাদের ঋতুস্রাবের সময় যে তাঁরা পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েন না, বরং একটু মনের জোর পেলেই এগিয়ে যেতে পারেন, সেই বার্তাই দিতে চাইছেন প্রকৃতি। তিনি যখন পেরেছেন, তখন সমস্ত মহিলাই প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারেন। তাঁর এই অভিযান আরও অনেক মহিলাকে আত্মবিশ্বাস যোগাবে বলে আশাবাদী তিনি।
আরও পড়ুন
মহিলা প্রতিযোগী থেকে রামধনু পতাকা, গ্র্যান্ড প্রিক্সের আয়োজনে ‘অচেনা’ সৌদি আরব
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
১৯৫৯ সালের গণিত-ধাঁধা সমাধান করে পুরস্কার ভারতীয় বংশোদ্ভূতের