‘ব্ল্যাক মার্বেল’, ‘নিগার’, ‘ওরিয়েন্টাল’, ‘ইন্ডিয়ান টেম্পার’ কিংবা ‘নেটিভ’— আজকের দিনেও কথায় কথায় অনেক সময়ই ব্যবহৃত হয় এইসকল শব্দবন্ধ। শুধু কথ্য ইংরাজিতেই নয়, ইংরাজি সাহিত্যেও ভুরি ভুরি ব্যবহার রয়েছে যে এসকল শব্দের। তবে আদৌ কি শোভন এইসব শব্দ এবং শব্দবন্ধ? আপত্তি তুলেছিলেন আধুনিক পাঠক এবং ভাষাবিদরা। আসলে এইসব শব্দের উৎপত্তি ঔপনিবেশিক যুগে। ফলে, প্রতিটি শব্দের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বর্ণবাদ, বৈষম্য এবং অত্যাচারের অন্ধকার অধ্যায়।
এবার ইংরাজি ভাষার সাহিত্যকে নিষ্কলঙ্ক করে তুলতেই অভিনব এক উদ্যোগ নিল কিংবদন্তি প্রকাশনা সংস্থা হারপার কলিনস। আগাথা ক্রিস্টির বেশ কিছু উপন্যাস থেকে বাদ (Removed) দেওয়া হল এ-ধরনের আপত্তিকর শব্দ। প্রকাশিত হল নতুন সংস্করণ। যার মধ্যে রয়েছে ‘মিস মার্পল’ প ‘পোয়রোট’-এর মতো রহস্য উপন্যাস। বিশেষত, ক্রিস্টির লেখায় প্রোটাগনিস্টরা যুক্তরাজ্যের বাইরে যে-সকল চরিত্রদের মুখোমুখি হয়েছে, তাঁদের সম্পর্কে উল্লেখিত বিশেষণগুলিকেই বদলে ফেলা হয়েছে এই সংস্করণগুলিতে।
তবে এই উদ্যোগ নতুন নয়। ২০২০ সালেই সর্বপ্রথম ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফে প্রকাশ পেয়েছিল শব্দবদলের এই পরিকল্পনার কথা। ততদিন ডিজিটাল সংস্করণে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন সংবেদনশীল পাঠকরা। এবার তার ভিত্তিতেই বৈষম্যমূলক ‘ক্ষতিকারক’ শব্দগুলি বাদ দিল হারপার কলিনস। উদাহরণস্বরূপ ধরে নেওয়া যেতে পারে ‘নেটিভ’ শব্দটিকে। সেটি বদলে গিয়ে বর্তমান সংস্করণে হয়েছে ‘লোকাল’। ‘ইন্ডিয়ান টেম্পার’-এর বদলে ব্যবহৃত হয়েছে ‘হট-হেডেড’। আবার কোথাও কৃষ্ণাঙ্গ মহিলার মৃতদেহ বোঝাতে ‘ব্ল্যাক মার্বেল’ শব্দবন্ধের ব্যবহার করেছিলেন ক্রিস্টি, বাদ পড়েছে সেই বর্ণনাও।
অবশ্য শুধু আগাথা ক্রিস্টিই নন, উনিশ ও বিশ শতকে রচিত বহু কিংবদন্তি লেখকের গল্প-উপন্যাসের শব্দও পরিবর্তিত হয়েছে সমান তালেই। সেই তালিকায় রয়েছেন ইয়ং ফ্লেমিং এবং রোল্ড ডাহলের মতো সাহিত্যিকরাও। ‘ফ্যাট’, ‘আগলি’-র মতো শব্দ বাদ পড়েছে ‘দ্য উইচেস’ থেকে। জেমস বন্ড সিরিজের বিখ্যাত বই ‘ক্যাসিনো রয়্যাল’ থেকে বাদ পড়েছে বেশ কিছু যৌন উদ্দীপনামূলক এবং শ্লেষাত্মক শব্দ।
বছর খানেক আগের কথা। ইংরাজি ভাষার এ-ধরনের আপত্তিজনক ‘ক্ষতিকারক’ শব্দের একটি বিশেষ তালিকা প্রকাশ করেছিল স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। সহস্রাধিক শব্দ বাদ দিয়েছিল ইংরাজি শব্দকোষ থেকে। সেই ঘটনার পর থেকেই ইংরাজি ভাষা ও সাহিত্যের ঔপনিবেশিক ছাপ মুছে ফেলতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে একাধিক প্রকাশনা সংস্থা। তবে পাঠকদের একাংশ খুশি হলেও প্রশ্ন তুলছেন বহু গবেষক এবং ভাষাবিদ। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বৈষম্যবিরোধী হলেও, উপন্যাস ও সাহিত্যের এই বদল ইতিহাসকে প্রভাবিত ও বিকৃত করবে বলেই অনুমান তাঁদের। আগামী প্রজন্মের পাঠকদের কাছে ‘ক্ষতিকর’ এইসব শব্দের পিছনে লুকিয়ে থাকা নেপথ্য কাহিনি না পৌঁছালে আদৌ কি সাম্যের পথে হাঁটতে পারবে মানব সভ্যতা? রয়ে যাচ্ছে সেই প্রশ্ন…
Powered by Froala Editor