চায়ের দোকানের কিছু দূরে রাখা ডাস্টবিন। শেষ হয়ে যাওয়া ভাঁড় নিখুঁতভাবে সেখানে ছুঁড়ে ফেলতে পারলে সে এক প্রতিভার পরিচয় বৈকি! আর যদি লক্ষ্যভেদ নাও হয়, ডাস্টবিনের কানায় লাগাতে পারাও যথেষ্ট কৃতিত্বের দাবি রাখে। বাংলার সর্বত্রই এমন খেলা খেলতে দেখা যায় ৮ থেকে ৮০ সকলকেই। কিন্তু যদি বলি, ঠিক এরকমই একটি খেলা আমেরিকার এই মুহূর্তে অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হিসাবে স্বীকৃত! অবাক হচ্ছেন? না না, সাহেবরা আমাদের মতো নন। তাঁরা যেখানে সেখানে মাটির ভাঁড় ছুঁড়ে চারপাশ আবর্জনায় ভরিয়ে তোলেন না। তবে খেলার মূল ধারা খানিকটা একই রকম। আর তার নাম ‘কর্নহোল গেম’(Cornhole Game)।
কর্নহোল, অর্থাৎ ভুট্টা গহ্বর। এই খেলায় খেলোয়াড়ের উল্টোদিকে কিছু দূরে রাখা থাকে একটি কাঠের পাটাতন। যার মধ্যে থাকে একটি গর্ত। খেলোয়াড়কে দূর থেকে নিখুঁতভাবে সেই গর্তে ছুঁড়ে ফেলতে হবে একটি ভুট্টাভর্তি ছোটো বস্তা। বস্তা যদি গর্তের মধ্যে পড়ে, তাহলেই পাওয়া যাবে ৩ পয়েন্ট। অবশ্য সান্ত্বনা পুরস্কারের ব্যবস্থা এখানেও আছে। গর্তে না পড়ে কাঠের পাটাতনের উপর পড়লেও পাওয়া যাবে ১ পয়েন্ট। ২ জন বা ৪ জন প্রতিযোগী দফায় দফায় খেলায় নামবেন। এই এক একটি ভাগকে কোথাও বলা হয় ইনিংস, আবার কোথাও ফ্রেম। প্রতিটা ফ্রেমের পর দুদিকের দুই প্রতিযোগীর বা দুটি দলের পয়েন্টের ব্যবধান হিসাব করে জয়ী দলটির স্কোর ঠিক করা হয়। আর এইভাবে যার স্কোর প্রথম ২১ ছোঁবে, সেই এই খেলা জিতবে।
ঠিক কবে এবং কোথায় এই খেলা শুরু হয়েছিল, তা অবশ্য বলা মুশকিল। কেউ বলেন মধ্যযুগের জার্মানিতে এই খেলার উৎপত্তি। আবার কারোর মতে ইলিনয়েসের ব্ল্যাকহক উপজাতির মধ্যে এর প্রচলন আরও অনেক আগে থেকে। তবে আজকের কর্নহোল খেলার সঙ্গে সেইসব সময়ের খেলার তেমন একটা মিল পাওয়া যায় না। বরং বলা যায়, ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে হেইলজার উইড আবিষ্কৃত পার্লোস ক্যুওটস খেলা থেকেই কর্নহোলের যাত্রা শুরু। আর তার জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ এটাই, যে কোনো ফাঁকা জায়গায় এটা খেলা যায়। আর ওই যে, ৮ থেকে ৮০ সবাই এই খেলায় নামতে পারে। অবশ্য খেলাটি আদৌ সহজ নয়। প্রায় ২০ ফুট দূরে রাখা থাকে একটি ৪ ফুট লম্বা এবং ২ ফুট চওড়া বোর্ড। আর তার মধ্যে মাত্র ৬ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের একটি গর্ত। এর মধ্যে যা বস্তাটি ফেলতে হবে তারও প্রতিটা প্রান্তের দৈর্ঘ্য ৬ ইঞ্চি।
আরও পড়ুন
কেটেলবেল খেলায় দু’বারের বিশ্বজয়ী এই বঙ্গতনয়া!
আরও পড়ুন
সংখ্যার খেলায় মজিয়েছেন বিশ্বকে, প্রয়াত সুদোকুর জনক মাকি কাজি
তবে সাধারণ মনোরঞ্জনের বাইরেও আজকাল কর্নহোল নিয়ে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়েছে। আমেরিকার তৈরি হয়েছে কর্নহোল অ্যাসোসিয়েশনও। প্রায় ২০ বছর ধরে এই সংস্থা খেলাটির উন্নতির নানারকম চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার মধ্যে খেলার সমস্ত সামগ্রীর নিখুঁত পরিমাপ তো আছেই। বস্তার ওজন, তার উপাদান সবই ঠিক করে দেওয়া হয়। এমনকি কোন বস্তা কাঠের পাটাতনে ধাক্কা খেয়ে কতটা লাফিয়ে উঠবে, তারও কিছু স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করে দিয়েছে সংস্থা। আর এইসমস্ত স্ট্যান্ডার্ড মেনে ২০১৫ সালে শুরু হয়েছে আমেরিকান কর্নহোল লিগ। প্রতি বছর কয়েকশো খেলোয়াড় অংশ নেন তাতে। আর তাঁরা কেউই শখের খেলোয়াড় নন। এই খেলা থেকে রীতিমতো উপার্জন করেন তাঁরা। তাহলে? পরেরবার চায়ের ভাঁড়টা ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলার আগে একবার ভাববেন, নিজের প্রতিভাকে সবটুকু মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে তো?
আরও পড়ুন
শুধু খেলাই নয়, বারবার রাজনৈতিক প্রতিবাদের মঞ্চও হয়ে উঠেছে অলিম্পিক
Powered by Froala Editor