গরমের দিনে কোকাকোলা (Coca-Cola) কিংবা অন্য ঠান্ডা পানীয়ের স্বাদ নেন না এমন মানুষ পাওয়া দুর্লভ। ভারত তো বটেই, জনপ্রিয়তার নিরিখে বিশ্বের সফটড্রিংকস প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির শীর্ষেই রয়েছে আটলান্টার এই মার্কিন সংস্থা। এবার এই আন্তর্জাতিক সংস্থার বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠল ‘গ্রিনওয়াশিং’-এর। কিন্তু কী এই গ্রিনওয়াশিং (Greenwashing)?
সাম্প্রতিক সময়ে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে চর্চা চলছে গোটা বিশ্বজুড়েই। একাধিক আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্মেলনেও উঠে এসেছে প্লাস্টিক দূষণের প্রসঙ্গ। নতুন করে প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করে পুনর্ব্যবহারের প্রস্তাব দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সার্বিকভাবে এই প্রচেষ্টা সফল না হলেও, সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও সচেতনতা গড়ে উঠেছে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। পরিবেশ সংস্থা ‘প্লাস্টিক প্ল্যানেট’-এর সমীক্ষা অনুযায়ী ‘প্লাস্টিক দূষণ’ শব্দটিই বর্তমানে একটি আবেগে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষের আবেগ, চেতনা ও দূষণ সম্পর্কে অপরাধবোধকেই বাণিজ্যিক লাভের চাবিকাঠি করে নিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিজ্ঞাপন বা বিপণনের ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘পরিবেশ-বান্ধব’, ‘কার্বন-নিউট্রাল’, ‘সাসটেনেবল’-এর মতো শব্দবন্ধ। তবে সবুজ বিপ্লবের কথা ফলাও করে বলা হলেও, আদতে এই ধরনের কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট সংস্থারা। এই ঘটনাকেই গবেষকরা চিহ্নিত করেছেন ‘গ্রিনওয়াশিং’ নামে।
গত জানুয়ারি মাসের কথা। একটি বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনজিউমার প্রোটেকশন এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্ক’। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পোশাক, প্রসাধনী, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং শিল্পজাত পণ্য প্রস্তুতকারক সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের সত্যতা যাচাই করাই ছিল এই সমীক্ষার প্রধান লক্ষ্য। সেখান থেকেই উঠে আসে পাঁচ শতাধিক খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতারণার জাল বিছিয়েছে ‘পরিবেশবান্ধব’ কথাটিকে সামনে রেখে। পরিবেশ দূষণরোধে ৪০ শতাংশ সংস্থার ক্ষেত্রেই তাদের দাবি সম্পূর্ণ ভুয়ো। এই তালিকাতেই নথিভুক্ত হয়েছে কোকাকোলার নাম।
‘উই আর ইনভেস্টিং ইন নিউ টেকনোলজিস টু রিসাইকেল দ্য আনরিসাইকেলেবল।’
কোকই হোক কিংবা থাম্বস আপ— কোকাকোলার প্রায় সমস্ত পণ্যের বিজ্ঞাপনেই লক্ষ করা যায় এই শব্দবন্ধটি। পাশাপাশি সংস্থার দাবি, সমুদ্র থেকে সংগৃহীত প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারে বোতল তৈরি করছে তারা। ইতিমধ্যেই নাকি লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে তিন শতাধিক এহেন বোতলের প্রোটোটাইপ তৈরি করে ফেলেছে কোকাকোলা। যার মধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে ২৫ শতাংশ মেরিন প্লাস্টিক।
কোকাকোলার এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলেই চিহ্নিত করছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা। পুনর্ব্যবহার কিংবা প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ তো দূরের কথা, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো প্লাস্টিক দূষকের উৎপাদক ‘কোকাকোলা’। ‘ব্রেক ফ্রি ফ্রম প্লাস্টিক ব্র্যান্ড’-এর অডিট অনুযায়ী, টানা চতুর্থ বছরের জন্য এই তকমা পেয়েছে কোকাকোলা। তবে শুধু কোকাকোলাই নয়, এই তালিকায় রয়েছে ইউনিলিভার, ওয়ালমার্ট, কোল, ম্যাকডোনাল্ডসের মতো সংস্থাও। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক গ্রাহক সুরক্ষা সংস্থা। এখন দেখার আদৌ এই প্রতারণায় ইতি পড়ে কিনা…
Powered by Froala Editor