একদিকে যেমন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে ঘিরে ক্রমশ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মানুষের মনে, তেমনই দীর্ঘ লকডাউনের ফলে ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছে পরিবেশ। ব্যাপকভাবে কমছে দূষণের মাত্রা। প্রকৃতি হয়তো এভাবেই নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে। আর এই প্রক্রিয়ার প্রভাব এসে পড়েছে আমাদের রাজ্যেও।
রাজ্যের নদীগুলির মাসখানেক আগের চেহারা আমূল বদলে গিয়েছে। মৃতপ্রায় নদীতে ফিরে আসছে মাছেরাও।
গত মাসেই পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যের ১৭টি নদীকে বিপজ্জনক আখ্যা দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। এইসব নদীর জল পান করা, এমনকি নদীতে স্নান করাও বিপজ্জনক বলে জানানো হয়েছিল। নদীর বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড এতটাই বেশি ছিল যে, মাছ তো বটেই মানুষের শরীরের জন্যও নদীর জল ক্ষতিকারক হয়ে উঠেছিল। আর এই তালিকায় সবচেয়ে উপরে ছিল বিদ্যাধরী নদীর নাম।
একমাস পেরোতে না পেরোতেই দৃশ্যটা যেন আমূল বদলে গেল। নদীর দূষণের মাত্রা ঠিক কোন জায়গায় আছে, সে বিষয়ে সমীক্ষা প্রয়োজন। তবে দীর্ঘদিন ধরে কলকারখানা বন্ধ থাকার ফলে নদীর জল যে অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে উঠেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই বিশেষজ্ঞদের। আর মৎসজীবী মানুষের অভিজ্ঞতাতেও তারই প্রমাণ মিলেছে। বিশেষ করে বিদ্যাধরী নদীর অবস্থা এমন হয়ে উঠেছিল যে জিওল মাছের দেখাও মিলত না বিশেষ। তবে এর মধ্যেই সেখানে মাছের দেখা মিলতে শুরু করেছে। এমনকি ট্যাংরা বা বাগদার মতো মাছও পাওয়া গিয়েছে বিদ্যাধরী নদীতে। অনেক নদীতে আবার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে ছোটো রানি মাছের সংখ্যাও। ফলে দূষণ যে অনেকটাই কমেছে, সেকথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
তবে কলকারখানা বন্ধ থাকলেও পুর অঞ্চলের বর্জ্য পদার্থ এখনও মিশছে নদীতে। ফলে দূষণের মাত্রা খুব বেশি কমার কথা নয়, মনে করছেন অনেকে। লকডাউন পর্বের শেষে সমীক্ষা চালালেই এ বিষয়ে স্পষ্ট মন্তব্য করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকরা। তবে এর মধ্যেই নদীর জলে বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ডের পরিমাণ যে দুই একক পর্যন্ত কমতে পারে, তেমনটা আশা করছেন অনেকেই। সেইসঙ্গে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণও বাড়ার কথা। ফলে নদীর জলের মৃতপ্রায় বাস্তুতন্ত্র আবার ফিরে আসার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। তবে লকডাউনের পর আবার কলকারখানার বর্জ্য পদার্থের ভারে অবস্থাটা বদলে যাবে না তো? এই আশঙ্কাও থেকে যায়।