যে কোনো খেলোয়াড়ের জীবনে অলিম্পিকে পদকজয় অনেকটা স্বপ্নের মতোই। আর সেই স্বপ্নপূরণের জন্যই তো দীর্ঘ দিন কঠিন অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন। এই অপার্থিব সফলতাকে শেষ পর্যন্ত স্পর্শও করে ফেলেছিলেন তিনি। দেশের হয়ে রুপোর পদক জয় করে এনেছিলেন টোকিও’র মঞ্চ থেকে। কিন্তু অলিম্পিক শেষ হওয়ার মাত্র কয়েকদিনের মাথাতেই জীবনের শ্রেষ্ঠ স্মারক, প্রাপ্তিকেই নিলামে তুললেন পোল্যান্ডের মহিলা জ্যাভেলিন থ্রোয়ার মারিয়া আন্দ্রেজিক।
কিছুদিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নজর এসেছিল মারিয়ার। বিরল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮ মাসের ছোট্ট শিশু মিনোসজেক মায়েসা পাঞ্জা লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে। তাকে একমাত্র সুস্থতায় ফেরাতে পারে জটিল অস্ত্রোপচার। যার খরচ প্রায় ২ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। সোশ্যাল মিডিয়ায় মিনোসজেকের বাবা-মায়ের কাতর আর্জি দেখে, দ্বিতীয়বার না ভেবেই পদক বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন মারিয়া। আর তা হবে নাই বা কেন? তিনি নিজেও যে জানেন, জীবনের মূল্য ঠিক কতখানি। ২০১৮ সালে যে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁর নিজের বোন। সেসময় অসহায়ের মতোই অর্থ-সংগ্রহের জন্য ঘুরে বেরিয়েছেন ২৫ বছর বয়সী পোলিশ তারকা।
বুধবার নিজের ফেসবুক পেজ থেকে নিজের পদক বিক্রির কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সেই মতোই নিলামে উঠেছিল তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কৃতিত্বের স্মারক। মাত্র একদিনের মধ্যেই পোলিশ সুপার মার্কেট চেন জাবকা ১ লক্ষ ২৫ হাজার মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয় তাঁর রৌপ্য পদকটি। সম্প্রতি গোটা অর্থটাই মিনোসজেকের পরিবারের হাতে তুলে দেন মারিয়া। তবে অর্থদানের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর মারিয়ার পদক ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে পোলিশ সংস্থাটি। জানানো হয়েছে, শিশুটির চিকিৎসার জন্য সমস্ত অর্থ সাহায্য সরবরাহ করবে তারাই।
এর আগে ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে মাত্র ২ সেন্টিমিটারে জন্য পদক হাতছাড়া হয়েছিল মারিয়ার। তারপর ২০১৭ সালে চোটের জন্য দীর্ঘদিন ক্রীড়াজীবন থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন তিনি। চলতি অলিম্পিকে তাঁর প্রত্যাবর্তন এক কথায় রূপকথার মতোই। ৬৪.৬১ মিটারের দূরত্ব স্পর্শ করে অলিম্পিকে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও সমস্ত পরিশ্রমের মূল্য জলাঞ্জলি দিয়ে, তাঁর এই মানবিক উদ্যোগ প্রশংসিত গোটা বিশ্বজুড়ে।
আরও পড়ুন
মাত্র ৫ জন প্রতিযোগী নিয়েই তিনটি পদক, অলিম্পিকজয়ী ক্ষুদ্রতম দেশের গল্প
আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশের সেনাদের চিকিৎসার জন্য নিজের নোবেল পদক গলিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন আরও এক মহীয়সী। মাদাম কুরি। আশ্চর্যের বিষয় হল, জন্মগতভাবে তিনিও ছিলেন পোলিশ। মারিয়ার মানবিক উদ্যোগ যেন সেই ইতিহাসকেই মনে করিয়ে দিল আরও একবার…
আরও পড়ুন
অলিম্পিকে মশাল রিলের ভারতীয় প্রতিনিধি আজ চা-বাগানের কুলি
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
রেকর্ড সময়ে ম্যারাথন-জয়, শেষ দিনেও বিস্ময়ের সাক্ষী অলিম্পিক