লকডাউনের শুনশান রাস্তা। তিলোত্তমার বুকে একা দাঁড়িয়ে বেহালা বাজিয়ে চলেছেন এক বৃদ্ধ ব্যক্তি। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এক পুলিশ। কেউ শুনছেন। আবার পাশ কাটিয়ে চলেও যাচ্ছেন অনেকে। সপ্তাহ খানেক আগে এই দৃশ্যই তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল কলকাতায়। প্রতিভাবান এই বেহালাশিল্পীর দুর্দশায় বুক মুচড়ে উঠেছিল অনেকেরই। তাঁর সেই ভিডিও শেয়ার করেছিলেন শ্রীলেখা মিত্র, রাজ চক্রবর্তী, রূপম ইসলাম-সহ একাধিক খ্যাতনামা তারকা। কে তিনি?
হ্যাঁ, ভগবান মালির কথাই হচ্ছে। লকডাউনের সময় গিরিশপার্কের ফুটপাথই হয়ে উঠেছিল তাঁর সঙ্গীত পরিবেশনার মঞ্চ। ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি আর বার্ধক্যের অসুস্থতা নিয়ে লকডাউনের মধ্যেও তিনি রোজ হাজিরা দিতেন সেখানে। কিন্তু কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা নন তিনি। আসল বাড়ি মালদায়। নাতনির ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর পেয়েই তিনি ছুটে এসেছিলেন কলকাতা শহরে। কিন্তু ফেরা হয়ে ওঠেনি আর। তার আগেই ঘোষিত হয়ে যায় লকডাউন। অন্যদিকে এই কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ হারান তাঁর জামাইও। পরিবারের মুখে সামান্য অন্ন তুলে দিতে তাই পথপরিবেশনাকেই হাতিয়ার করে নেন জনৈক বেহালাবাদক।
ভগবান মালি ছোটবেলায় তালিম নিয়েছিলেন তাঁর বাবার থেকেই। তিনিও ছিলেন মালদার খ্যাতনামা বেহালাবাদক। পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে সঙ্গীতকেই জীবনের মূলমন্ত্র, উপার্জনের পথ হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন ভগবান। কিন্তু ভিন-শহরে লকডাউনের সময় শিল্পীদের জন্যই বা কাজ কোথায়? তাই পথে নামা।
তবে দিন বদলেছে। তাঁর এই দুরাবস্থার কথা প্রকাশ্যে আসতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকেই। খ্যাতনামা শিল্পী থেকে শুরু করে সমাজকর্মী, রাজনৈতিক নেতারাও পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর। জুটেছে পাঁচতারা হোটেলে বেহালাবাদনের কাজও। কিছুদিন আগেই অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস চত্বর মেতে উঠেছিল তাঁর মন্ত্রমুগ্ধ করা বেহালার সুরে। আর সেই উদ্যোগ নিয়েছিল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রক্ষক ফাউন্ডেশন এবং কলকাতা পুলিশের কমিউনিটি পুলিশিং বিভাগ। জানানো হয়েছিল বিশেষ সংবর্ধনাও। আজ লালবাজারে একটি অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে নতুন বেহালা তুলে দেন নগরপাল সৌমেন মিত্র। এভাবেই বোধ হয়, প্রতিভাবান শিল্পীর পাশে সবসময় এসে দাঁড়ায় নাগরিক সমাজ। আজকের ঘটনা জীবন্ত উদাহরণ হয়ে রইল তারই…
আরও পড়ুন
সত্যজিতের সিনেমায় সুর তুলত তাঁর বেহালা, বিস্মৃতির অতলে বেলঘরিয়ার মিহির গুপ্ত
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অপারেশন চলছে মস্তিষ্কে, সুরের জ্ঞান বাঁচাতে ভায়োলিন বাজিয়ে চললেন রোগী