দূষণের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের জমায়েত নালিকুলে, নেমে এল পুলিশের অত্যাচার

হুগলির নালিকুলের ভ্যাক্স সেটিং কারখানা। এই কারখানায় মূলত তৈরি হয় ইমিটেশন গয়না। এককথায়, কাস্টিং-এর কাজ। অথচ এর ফলেই নিয়মিত ছড়াচ্ছে দূষণ। কাস্টিং পোড়ানো অর্থাৎ অ্যাসিডে ধাতু গলানোর ফলে যে বিষাক্ত ধোঁয়া তৈরি হয়, তাতেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন গ্রামের মানুষ। এর সঙ্গে রয়েছে প্লাস্টার অব প্যারিসের সাদা গুঁড়ো, যা বাতাসের সঙ্গে মিশে ক্ষতি করছে ফুসফুসের। সব মিলিয়ে শ্বাসকষ্ট আর চামড়ার অসুখে নাজেহাল গ্রামবাসীরা। বিগত কয়েক বছর ধরেই এই অব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।

গত ৩০ অক্টোবর তীব্র ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে রাস্তা অবরোধ করেন গ্রামের মানুষজন। অবশেষে পুলিশ আশ্বাস দেয়, তারা নিয়ন্ত্রণে আনবে পরিস্থিতি। এরপরও বিশেষ বদলায়নি সামগ্রিক ছবিটা। পরের দিনই পুলিশ জানায়, কারখানাটির কাগজপত্র সমস্ত বৈধ, ছাড়পত্র রয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদেরও।

এরপর, ৪ নভেম্বর কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনাও হয় গ্রামবাসীদের। কিন্তু তার পরদিনই বদলে যায় সবকিছু। অভিযোগ, নালাকুলের একটি কারখানার মালিক বিকাশ দাস নিজের প্রতিপত্তি খাটিয়ে ১০০ জন শ্রমিক নিয়ে গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে পথ অবরোধ করেন। অথচ তাঁর কারখানার শ্রমিক সংখ্যা ৬-৭ জনের বেশি নয়।

পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে ওঠে গতকাল অর্থাৎ ৬ নভেম্বর, যখন স্থানীয় বাসিন্তা প্রদীপ দে দূষণের কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে বমি, তারপর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। দূষণের এই প্রভাব দেখে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা জড়ো হন কারখানার সামনে।

এরপরই মাঠে নামে পুলিশ। ঝাঁপিয়ে পড়ে গ্রামবাসীদের ওপর। ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে লাথি ঘুঁষি চালায় তারা। না, মহিলা পুলিশ ছিল না কোনো। অবশ্য তার পরোয়া করেনি পুলিশবাহিনী। সঙ্গে নামে র‍্যাফও। পুলিশের আক্রমণে আহত হন কয়েকজন গ্রামবাসী। তবু পিছিয়ে আসেননি তাঁরা। বুক চিতিয়ে চালিয়ে গেছেন প্রতিবাদ।

পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি চাইছেন গ্রামবাসীরা। দূষণ কমুক, সঙ্গে কমুক এই নৈরাজ্য – এটাই একমাত্র দাবি তাঁদের।