ডিসেম্বর পড়লেই ঠান্ডায় কার্যত জমাট বেঁধে যায় বাঙালিরা। দীর্ঘ রাত গড়িয়ে সকাল হলে স্বস্তি মেলে খানিক। সূর্য উঠলে ধীরে ধীরে কমে আসে ঠান্ডার কাঁপুনি। কিন্তু শীতের এই মরশুমে যদি সূর্যোদয়ই আর না হয়, তবে? কলকাতায় অবাস্তব হলেও এমনটাই ঘটে আলাস্কায়। মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থান হওয়ায় দীর্ঘতম রাত্রির আঁধারের তলিয়ে যায় হিমশীতল আলাস্কা। গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ১:৩০ নাগাদ শেষবারের জন্য সূর্যকে দেখা গেল আলাস্কার ছোট্ট প্রান্তবর্তী শহর উটকিয়াগভিকে।
উটকিয়াগভিক শহর হিসাবে পরিচিত হলেও, এর পূর্ববর্তী নাম ‘ব্যারো’। অবস্থান আর্কটিক সার্কেল থেকে ৩২০ মাইল দূরে। মেরু অঞ্চলে যেমন ৬ মাস স্থায়ী হয় রাত, এখানের অবস্থা অবশ্য তেমন নয়। কিন্তু ৬৬ দিনের দীর্ঘ অন্ধকারযাপন নেহাত কম কি? দিনের ২৪ ঘণ্টাই সূর্য বেশ কয়েক ডিগ্রী নিচে থাকে দীগন্ত রেখার। কাজেই দিনের বেলাতে উষ্ণতা বাড়লেও তা নিতান্তই সামান্য। সমগ্র শহরই যেন ডুবে যায় হিমশীতল রেফ্রিজারেটরের মধ্যে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ছুঁতে পারে না শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসকে। যতদূর চোখ যায় শুধু সাদায় সাদা, বরফ আর বরফ।
তবে উল্লেখ্য গতকাল সূর্য দেখা দিলেও তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৩৫ মিনিট। আলাস্কার আবহাওয়া দপ্তরের মতে আবার তার দেখা মিলবে সেই জানুয়ারি মাসে। ২৩ জানুয়ারি বেলা ১টা ১৬ মিনিটে হবে সূর্যোদয়। তবে এই দীর্ঘতম ‘মেরু রাত্রি’ চললে একেবারে অন্ধকার হয়ে থাকে না আলাস্কার আকাশ। সেখানে রাতভরই চলতে থাকে নানান রঙের আলোর খেলা। মেরুজ্যোতির আভা চক চক করে জমাট বেঁধে যাওয়া নদী, লেকের ওপর পড়ে।
তবে এই দীর্ঘতম রাত পেরিয়ে গেলে, শীতকাল শেষ হলে গ্রীষ্মে মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত আলাস্কার অধিবাসীরা আবার রাতের নাম-গন্ধ পাবেন না মাস দুয়েক। তবে গ্রীষ্ম বললেও, তা কলকাতার ডিসেম্বরের থেকে খুব কিছু কম নয়। যদিও সেই তাপমাত্রাই তাঁদের কাছে চরমতম স্বস্তিদায়ক। ততদিন অবধি অপেক্ষা করে যাওয়া শীতসহ্য করে। মাঝের সময়টুকুর জন্য এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে আলাস্কাবাসীরা। অন্ধকার যুগ কাটানোর জন্য সংগ্রহ করে রাখছেন ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট। সূর্যের অনুপস্থিতিতে তা যে অত্যাবশ্যকীয়। সেই সঙ্গে পশমের ভারী পোশাক। নাহলে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করা যাবে কেমনভাবে?
Powered by Froala Editor