পঞ্চাশ দশকের যে ক’জন সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন, তাঁরা সকলেই একে একে চলে যাচ্ছেন। এ যে তারা ভরা আকাশের নক্ষত্র পতন। বেশ কিছু মাস আগেই আমরা হারিয়েছি নবনীতা দেবসেনকে। এবার চলে গেলেন তাঁরই আরেক সুহৃদ প্রখ্যাত কবি প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়। দীর্ঘ দিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। গত দুমাসে তা আরও চরম পর্যায়ে চলে যায়। উপরন্তু মহামারীর কারণে চিকিৎসারও সমস্যা হয়। যার ফলে তাঁর শরীরের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। আজ সকালে তিনি তাঁর যোধপুর পার্কের আবাসনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর মহালয়ার দিন কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পাঠ অসম্পূর্ণই থেকে গেছে। ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার আগেই বন্ধুর পরামর্শে পি-এস-সি পরীক্ষা দেন ও পাশ করে চাকরিতে যোগ দেন। দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে বেশ কিছু দিন রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিমও নিয়েছেন। পনেরো বছর বয়স থেকেই লেখালেখির শুরু। কৃত্তিবাস পত্রিকার সঙ্গে দ্বিতীয় সংখ্যা থেকেই লিখেছেন। এই পত্রিকার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ শেষদিন পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিল। তাঁর প্রথম কাব্য গ্রন্থ 'অতলান্ত' প্রকাশিত হয় ১৩৬১ সালে কৃত্তিবাস প্রকাশনী থেকে। সারা জীবনে লিখেছেন অজস্র কবিতা ওগদ্য। তাঁর মোট কবিতার বই যদিও মাত্র সাতটি। শেষ গ্রন্থ 'কেমন আছে এই পৃথিবী' প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে। দীর্ঘ বিরাশি বছরের জীবনে পারিবারিক বহু বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হয়েছিল তাকে। সব প্রিয়জনদের হারিয়েও কখনও জীবনকে মনে নিয়েছিলেন তার মতো করে। যদিও দুঃখের বিষয় এই যে, তিনি কোনোদিনও তাঁর প্রাপ্য সম্মান পাননি। তিনি যে মাপের কবি ছিলেন সে তুলনায় তাঁর খ্যাতি ও প্রাপ্তির ভাণ্ডার সীমিত। এই লজ্জা আমাদের রয়েই যাবে।
নবীন প্রজন্মের লেখকদের কাছে প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায় ছিলেন ছাতার মতো। যারা তাঁর সামান্যতম সান্নিধ্য পেয়েছেন তারাই জানেন, তিনি কতটা স্নেহপ্রবণ ব্যক্তি ছিলেন। শেষ জীবনের রাজ্য সরকার ও আরো কিছু সংস্থার তরফ থেকে বেশ কিছু সম্মান পেয়েছেন। যদিও তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী ‘এখন এসব দিয়ে কী হবে? যখন এগুলোর গুরুত্ব ছিল জীবনে তখন তো পেলাম না!’ তাঁর প্রয়াণে সাহিত্য মহলে শোকের ছায়া।