লকডাউনে দেশজুড়ে চোরাশিকার বেড়েছে ৫১ শতাংশ, কমেছে পশুপাচার

সমস্ত পৃথিবীর মানুষের অস্তিত্বই যখন সংকটে, তখন কি আদৌ অন্য প্রাণীদের দিকে ফিরে তাকানোর সময় থাকে? করোনা বিধ্বস্ত পৃথিবীতে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ তাই বিলাসিতা, এমনটাই মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে সরকারিভাবে বন্যপ্রাণী সুরক্ষার বিষয়টিকে অতি প্রয়োজনীয় কাজের তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কেমন আছে আমাদের বনভূমির বাসিন্দারা? লকডাউনের দিনগুলিতে কেমন কাটল তাদের জীবন? সেই প্রশ্নের উত্তর দিল 'ট্রাফিক'এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট। এবং রিপোর্টের পরিসংখ্যান যথেষ্টই উদ্বেগের কারণ।

আন্তর্জাতিক স্তরে পশু ব্যবসার উপর নজরদারি করে থেকে 'ট্রাফিক'। আর এই সংস্থার সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, লকডাউনের দুমাসে ভারতে চোরাশিকারের সংখ্যা বেড়েছে ৫১ শতাংশ। লকডাউনের আগের শেষ ৬ সপ্তাহে চোরাশিকারের ঘটনা ঘটেছিল ৩৫টি। সেখান থেকে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮। এবং সবদিকেই সুযোগের অবকাশ সমান থাকায় শিকারিদের লক্ষ্য থেকে বাদ যায়নি প্রথম তফসিলের প্রাণীরাও। তবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বেড়েছে তৃতীয় তফসিলের প্রাণী শিকার। এই তালিকার প্রাণীরা বিশেষভাবে বিপন্ন হলেও এখনও দেশের নানা জায়গাতেই তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।

লকডাউনের ফলে প্রাণী সুরক্ষা বিভাগের নানা কর্মসূচি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর তার ফলেই বেড়েছে চোরাশিকারের সংখ্যা। তবে শিকারের পাশাপাশি গ্রেফতারের সংখ্যাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। লকডাউনের আগের ৬ মাসে যেখানে ৮৫ জন শিকারি গ্রেফতার হয়েছিল, সেখানে লকডাউনের সময় সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২২। তবে এই রিপোর্টে সবটাই যে হতাশাব্যঞ্জক, এমন নয়। রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, বাণিজ্যিক কারণে শিকারের সংখ্যা বরং হ্রাস পেয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। অধিকাংশ শিকারই প্রকৃতপক্ষে বড়ো ধরনের বিড়াল বা স্তন্যপায়ী। প্রধানত মাংসের প্রয়োজনেই এই প্রাণীদের শিকার করেছে মানুষ। 

এই প্রবণতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার চেহারাও। তবে আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও, এই প্রবণতা একবার শুরু হলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া এতদিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দরজা বন্ধ থাকায় বিরল প্রাণীর পাচার সম্ভব হয়নি। কিন্তু আবার বাণিজ্য শুরু হলেই তার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ফলে আগামী কিছু মাস দেশের প্রাণী সুরক্ষার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথেষ্ট সজাগ থাকতে হবে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।

Powered by Froala Editor

Latest News See More