পৃথিবীর মতোই প্লুটোকেও (Pluto) দীর্ঘদিন ঘিরে ছিল তার বায়ুমণ্ডল (Atmosphere)। দিনে দিনে সেই বায়ুমণ্ডলের চেহারা বদলেছে। গ্যাসীয় বায়মণ্ডলের অনেকটা জুড়ে নিয়েছে বরফের টুকরো। তবে এবার সেই বায়ুমণ্ডল একেবারেই হারিয়ে যেতে চলেছে। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। শুধু তাই নয়, প্লুটোর এই পরিবর্তন যেন পৃথিবীর ভবিষ্যৎকেও দেখিয়ে দিচ্ছে। হয়তো একইভাবে একদিন বায়ুশূন্য হয়ে পড়বে এই সুজলা সুফলা গ্রহটিও।
পৃথিবী থেকে প্রায় ৪.৮ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বামনগ্রহ প্লুটো। স্বাভাবিকভাবেই প্লুটো সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের ধারণা খুবই সীমিত। সৌরমণ্ডলের প্রায় সীমান্তে অবস্থিত হওয়ায় এখানে সূর্যের আলোও পৌঁছায় না বললেই চলে। তাই দূরবীক্ষণ যন্ত্রেও তেমন কিছু ধরা পড়ে না। তবে বছর তিনেক আগে কুপার বেল্টের কাছে একটি ছোটো নক্ষত্রের খুব কাছ দিয়ে চলে গিয়েছিল প্লুটো। সেই নক্ষত্রের আলোয় মাত্র ২ মিনিটের জন্য দেখা গিয়েছিল বামন গ্রহটিকে। আমেরকা এবং মেক্সিকোর দূরবীক্ষণ যন্ত্রগুলি তখন চোখ রেখেছিল প্লুটোর বুকে। আর সেই বিরল মুহূর্তটিই গবেষকদের কাছে নতুন দিগন্ত খুলে দিল।
৩ বছর ধরে সেই ২ মিনিটের ভিডিওটিকে পর্যবেক্ষণ করে গিয়েছেন সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউশনের বিজ্ঞানীরা। অবশেষে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, হারিয়ে যেতে বসেছে প্লুটোর বায়ুমণ্ডল। দেখা গিয়েছে, ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে এখনও গ্যাসীয় আচ্ছাদনের অস্তিত্ব থাকলেও নিচের অংশে বরফের স্তর সুস্পষ্ট। আর এই বরফ শুধু জলকণা দিয়ে তৈরি নয়, নাইট্রোজেন গ্যাসও বরফে পরিণত হয়েছে। ফলে খুব তাড়াতাড়ি সমগ্র বায়ুমণ্ডলই যে বরফে পরিণত হবে, এবং ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে তার কোনো পার্থকই থাকবে না, সে-কথা বলাই যায়। আর স্বাভাবিকভাবেই সেখানে প্রাণের অস্তিত্বও সম্ভব হবে না।
যদিও প্লুটোয় প্রাণের অস্তিত্বের আশা কোনোদিনই করেননি বিজ্ঞানীরা। তবে এই গবেষণা যেন পৃথিবীর ভবিষ্যতকেও দেখিয়ে দিচ্ছে। আর তার কারণ এই দুই গ্রহেরই বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল নাইট্রোজেন। যদিও সেই ভবিষ্যত এখনও অনেক দূর। ততদিনে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব যে মুছে যাবে, সে-কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তবে অন্য কোনোভাবে তো প্রাণের অস্তিত্ব থেকে যেতেও পারে। অন্তত সেই সম্ভাবনা থেকেই যায়। বায়ুমণ্ডল মুছে গেলে আর কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের পক্ষেই বেঁচে থাকা সম্ভব হবে না। শুধু কিছু এককোষী জীব বেঁচে থাকতে পারে বড়োজোর।
আরও পড়ুন
সৌরজগতের দূরতম সদস্য প্লুটোও উষ্ণ অবস্থায় ছিল দীর্ঘদিন, বলছে গবেষণা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কঠিন আবরণের ভেতর লুকিয়ে সমুদ্র, প্লুটো নিয়ে এমনই তথ্য পেল নাসা