পৃথিবীর মতোই সৃষ্টির মুহূর্তে জ্বলন্ত অগ্নিগোলক ছিল মঙ্গল কিংবা শুক্রগ্রহ। তবে ক্রমশ তাপমাত্রা কমায় শীতল হয়ে জমাট বেঁধে যায় তাদের গোটা ভূমণ্ডলটাই। ফলত, পাথুরে গ্রহে পরিণত হয় মঙ্গল এবং শুক্রগ্রহ। এমনটাই ধরে নেওয়া হত এতদিন। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গিই এবার বদলাতে চলেছে। এখনও পুরোটা জমাট বেঁধে যায়নি শুক্রের উপরিতল, প্রাণ রয়েছে তার অভ্যন্তরে। এবার তেমনটাই ধরা পড়ল গবেষকদের অনুসন্ধানে।
সম্প্রতি শুক্রগ্রহ থেকে প্রাপ্ত বেশ কিছু তথ্যের বিশ্লেষণেই চমকে ওঠেন গবেষকরা। ধরা পড়ে শুক্রের পৃষ্ঠতল ক্রমশ অবস্থান পরিবর্তন করে চলেছে। যার আর আর কিছুই নয়, শুক্রের টেকটোনিক প্লেটের চলাচল। কিন্তু টেকটোনিক প্লেটের অস্তিত্ব যে পৃথিবী ছাড়া সৌরজগতের আর কোনোগ্রহেই নেই! তবে? গবেষকদের অভিমত, এতদিন ধরে পুষে রাখা ধারণাই আসলে ভ্রান্ত। শুধু আয়তনই নয়, পৃথিবীর সঙ্গে যমজ-গ্রহ শুক্রের ভৌগলিক ও পরিবেশগত মিল রয়েছে তার অভ্যন্তরেও। আর তা এতদিন ছিল দৃষ্টির আড়ালেই।
কিন্তু কীভাবে প্রকাশ্যে এল এই তথ্য? লন্ডন বিশ্ববিদ্যলয়ের গবেষক ডঃ বাইরন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডাঃ রিচার্ড ঘাইল, শান সলোমন এবং তাঁর সহকর্মীরা মূলত পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন শুক্রগ্রহের পৃষ্ঠদেশের পাথুরে খাঁজগুলির ওপরে। পৃথিবীর মেরু প্রদেশের বরফের সঙ্গে তাদের অদ্ভুত মিল রয়েছে। তবে দীর্ঘকালীন তথ্য সংগ্রহের পর দেখা যায় শুক্রের পাথুরে খাঁজগুলি ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে। অর্থাৎ, শুক্রের পৃষ্ঠতল খণ্ডিত কিছু ছোট ছোট পাথুরে টুকরোতে। গবেষকদের অনুমান, সেগুলি প্রায় ১০০ থেকে ১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
এর আগে ১৯৯৪ সালে নাসার মেগালান স্পেসক্রাফট শুক্রগ্রহের কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিল। সেখানে ধরা পড়েছিল, শুক্রের শরীরে ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় ১৩৩টি আগ্নেয়গিরি। তখনও সন্দেহ জেগেছিল বিজ্ঞানীদের মনে। কিন্তু বিস্তারিত গবেষণা হয়নি কিছুই। তবে শুক্রের অভ্যন্তরীণ আগ্নেয়তরল যে পুরোপুরি জমাট বাঁধেনি— সেই ঘটনা তারই ইঙ্গিত ছিল বলে ধারণা গবেষকদের। তাঁদের বিশ্বাস এখনও ৩৭টি আগ্নেয়গিরি সক্রিয় রয়েছে শুক্রগ্রহে।
আরও পড়ুন
মঙ্গলে সংরক্ষিত রয়েছে ৩০-৯৯ শতাংশ জল, জানাল নাসার সাম্প্রতিক গবেষণা
এই রহস্যময় ঘটনার সদুত্তর পেতে ইতিমধ্যেই অভিযানের তোড়জোর শুরু করে দিয়েছেন মহাকাশ গবেষকরা। শুক্রের ভৌগলিক বৈশিষ্ট জানতে ২০৩০ সালের মধ্যেই দু-দুটি অভিযান করতে চলেছে নাসা। তার মধ্যে ‘দ্য ভিঞ্চি প্লাস’ পরীক্ষা করবে শুক্রের বায়ুমণ্ডলকে। অন্যদিকে দ্বিতীয় অভিযান ‘ভেরিটাস মিশন’ শুক্রের লিথোস্ফিয়ারের টেকটোনিক চলাচলের তথ্য সংগ্রহ করে আনবে যমজ-গ্রহ থেকে। শুধু নাসাই নয়, অনুসন্ধানে নেমেছে ইউরোপের স্পেস এজেন্সিও। মহাকাশযান থেকেই রাডার মানচিত্রের মাধ্যমে শুক্রগ্রহের পৃষ্ঠতল পরীক্ষা করবেন তাঁরা। সব মিলিয়ে এই নতুন আবিষ্কারে উচ্ছ্বসিত বিশ্বের গবেষকরা।
আরও পড়ুন
শুক্রগ্রহেই রয়েছে প্রাণের অস্তিত্ব? সাম্প্রতিক আবিষ্কারে চাঞ্চল্য বিজ্ঞানী মহলে
বছর খানেক আগের কথা। আরও এক চমকপ্রদ আবিষ্কার চমকে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকেই। শুক্রের বায়ুমণ্ডলে প্রথমবারের জন্য সন্ধান মিলেছিল ফসফিন গ্যাসের। যা মূলত একটি জৈব গ্যাস। সেই আবিষ্কারই উসকে দিয়েছিল প্রতিবেশী গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে। এবার বছর ঘুরতে না ঘুরতেই যেন আরও এক চমক দিল শুক্রগ্রহ। জানিয়ে দিল, এখনও ‘মৃত’ হয়ে যায়নি সে…
Powered by Froala Editor