করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ, আর তার জেরেই বিশ্বজুড়ে লকডাউন। এসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে মানুষের কর্মকাণ্ড। আর তার কারণেই হঠাৎ করেই একেবারে তলায় এসে ঠেকেছে দূষণের মাত্রা। কিন্তু এতদিনের দূষণের থেকে যে আদৌ শাপমুক্ত হয়নি প্রকৃতি, এবার তারই প্রমাণ দিল বাংলাদেশের ঘটনা। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে এল বহু কচ্ছপের মৃতদেহ।
কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্রতটের চেহারা গত রবিবার একেবারেই অন্যরকম ছিল। জোয়ারে উত্তাল ছিল সমুদ্র। আর তাতেই ভেসে এল প্লাস্টিক, কাঁচের বোতল, মাছ ধরার ছেঁড়া জাল আর ইলেকট্রনিক বর্জ্য। ‘প্লাস্টিক ব্যাঙ্ক বাংলাদেশ’ নামক এক সংস্থার বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা কাজ চালাচ্ছিলেন পরিষ্কারের। প্রথমে তাঁদেরই নজরে আসে আবর্জনার সঙ্গে ভেসে এসেছে কয়েক ডজন মৃত ও আহত কচ্ছপ। কলাতলি থেকে হিমছড়ি অবধি ১০ কিমি সমুদ্রতটে মেলে অন্তত দু’ডজন অলিভ রিডলি প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ। অধিকাংশই আটকে পড়েছে মাছের জালে।
ঘটনার কথা প্রকাশ পেতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। শতাধিক আঞ্চলিক মানুষ হাত লাগান বিরল এই প্রাণীর উদ্ধারে। আহত বেশ কিছু কচ্ছপকে জালমুক্ত করে সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া হয়। মারা যায় অন্তত ২০টি কচ্ছপ। ‘এএফপি’ সংস্থার এক আধিকারিক জানান, মৃত কচ্ছপগুলির অধিকাংশেরই বয়স ৩০ বছরের মতো। কয়েকটি কচ্ছপের পেটে পাওয়া গেছে ডিমও।
কক্সবাজারের এই ঘটনা ঘিরেই চিন্তা দানা বাঁধছে বিশেষজ্ঞদের মনে। একদিনে ৫০ টন বর্জ্যের ভেসে আসা ইঙ্গিত দিচ্ছে বঙ্গোপসাগরের চূড়ান্ত দূষণের মাত্রার। প্রশ্ন উঠছে সামুদ্রিক প্রাণীরা কতটা নিরাপদ সে ব্যাপারেও। ওলিভ রিডলি প্রজাতির কচ্ছপটির দেখা মেলে পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তেই। কিন্তু শেষ কয়েক বছরে আশঙ্কাজনকভাবে সংখ্যা কমেছে এই প্রজাতির। স্থান নিয়েছে বিপন্নপ্রায় প্রাণীর লাল তালিকায়। এবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে একসঙ্গে এতগুলি কচ্ছপের মৃত্যুতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে বলেই, আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা...
Powered by Froala Editor