সবুজ বিপ্লবের নেপথ্যে তিনি, মরণোত্তর পদ্মভূষণ ভারতীয় গবেষকের

নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী নরম্যান বোরগালের অন্যতম ভরসা ছিলেন তিনি। ১৯৭২ সাল। বয়স তখন মাত্র ২৯ বছর তাঁর। প্রয়াত হলেন ডঃ বোরগাল। শূন্য হল আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টরের আসন। আর সেই দায়িত্বই এসে পড়ল তাঁর কাঁধে। না, পিছিয়ে যাননি। বরং, অক্ষরে অক্ষরে সেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। বিপ্লব এনেছিলেন কৃষির দুনিয়ায়। 

ডঃ সঞ্জয় রাজারাম (Dr Sanjay Rajaram)। ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ৭৮ বছর বয়সে মেক্সিকোর সোনোরা প্রদেশের সিউদাদ ওব্রেগন শহরে প্রয়াত হয়েছিলেন কিংবদন্তি ভারতীয় বিজ্ঞানী। এবার মরণোত্তর পদ্মভূষণ (Padmabhushan) সম্মানে ভূষিত হলেন সবুজ বিপ্লবের নেপথ্যে থাকা এই গবেষক।

১৯৪৩ সালে বারানসীর নিকটবর্তী রাইপুরের এক কৃষক পরিবারে জন্ম ডঃ সঞ্জয় রাজারামের। প্রাথমিকভাবে গোরখপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিকাজে স্নাতকতা সম্পূর্ণ করেন তিনি। তারপর স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করেন দিল্লির আন্তর্জাতিক জাতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে। সেই সময় থেকেই একাধিক উল্লেখযোগ্য গবেষণার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে তাঁর নাম। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করার সময় তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়, ডঃ নরম্যান বোরগালের। বোরগালই তাঁকে সহকর্মী হিসাবে নিয়োগ করেন মেক্সিকোর আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা গবেষণা কেন্দ্রে।

বোরগালের জীবনাবসানের পর টানা ৩৩ বছর এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন সঞ্জয় রাজারাম। আবিষ্কার করেছিলেন ৪৮০টি গমের প্রজাতি। শুধু উৎপাদন হার বৃদ্ধিই নয়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কঠিন আবহাওয়ার মধ্যেও যাতে গম উৎপাদনে ভাঁটা না পড়ে— সেই কথা মাথায় রেখেই তিনি ব্রিডিং করেছিলেন সংশ্লিষ্ট প্রজাতিগুলির। যার মধ্যে অধিকাংশ প্রজাতিই শীত এবং বসন্ত উভয় ঋতুতেই গম উৎপাদনে সক্ষম। সেইসঙ্গে মরিচা প্রতিরোধকও। বর্তমানে পৃথিবীর ৬টি মহাদেশের ৫১টি দেশে চাষ করা হয় এই ধরনের গম। গুজরাটের ঐতিহাসিক সবুজ বিপ্লবের নেপথ্যেও রয়েছে ডঃ সঞ্জয় রাজারামের আবিষ্কৃত গমের প্রজাতি। পরিসংখ্যানের দিক থেকে দেখতে গেলে, সঞ্জয় রাজারামের আবিষ্কারের সৌজন্য বিশ্বব্যাপী গমের উৎপাদন স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ২ কোটি মেট্রিক টন। 

আরও পড়ুন
সূর্যরশ্মি প্রতিফলনে ‘না´ বিজ্ঞানীদের, কেন?

পাশাপাশি ‘শাটল প্রজনন’-এর অন্যতম উদ্ভাবকও তিনি। শুধু বৈজ্ঞানিক ও কৃষিজ আবিষ্কারই নয়, একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা নিবারণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। জাতিসঙ্ঘের ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম’-এর অন্যতম পরামর্শদাতা গবেষক ছিলেন ডঃ সঞ্জয় রাজারাম। 

আরও পড়ুন
প্রথমবার সুপারনোভা বিস্ফোরণের সাক্ষী বিজ্ঞানীরা, প্রকাশিত ভিডিও

২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা গবেষণা কেন্দ্র থেকে অবসর নেন কিংবদন্তি ভারতীয় গবেষক। তবে বিজ্ঞানের প্রতি অনুসন্ধিৎসা থেমে যায়নি কখনোই। শেষ বয়সেও বহু সম্মেলনে গমের প্রজনন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কৃষির প্রচার নিয়ে বক্তৃতা রেখেছেন। পালন করেছেন পরামর্শদাতার ভূমিকা। সেইসঙ্গেই চলত তরুণ গবেষকদের ক্লাস নেওয়া। তাঁর হাত ধরেই উঠে এসেছেন বিশ্বের প্রথম সারির প্রায় সাত শতাধিক কৃষিবিজ্ঞানী। 

আরও পড়ুন
ভারত, সোমালিয়া এবং মাদাগাস্কার নিয়ে নতুন মহাদেশ, ভবিষ্যদ্বাণী বিজ্ঞানীদের

২০০১ সালে ভারত সরকার পদ্মশ্রী পুরস্কারের সম্মানিত করেছিল ডঃ সঞ্জয় রাজারামকে। ২০১৪ সালে পেয়েছিলেন ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজও। এবার মরণোত্তর তাঁর মুকুটে জুড়ল আরও একটি নতুন পালক…

Powered by Froala Editor