১৯৯৪ সাল। মুক্তি পেয়েছিল পিঙ্ক ফ্লয়েডের সাড়া জাগানো অ্যালবাম ‘ডিভিশন বেল’। তারপর বেশ কিছু যন্ত্রসঙ্গীত প্রকাশ্যে আনলেও, নতুন কোনো পূর্ণাঙ্গ গান রেকর্ড করেনি ব্রিটিশ ব্যান্ডটি। এবার রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে দীর্ঘ ২৮ বছর পর প্রত্যাবর্তন করল পিঙ্ক ফ্লয়েড (Pink Floyd)। রুশ (Russia) আগ্রাসনের বিরোধিতা করে প্রকাশ করল নতুন প্রতিবাদী গান।
‘হে, হে, রাইস আপ!’ সম্প্রতি, ইউটিউবে পিঙ্ক ফ্লয়েডের অফিশিয়াল চ্যানেলে আনুষ্ঠানিক মুক্তি পেল এই গানটি। রুশ আগ্রাসন এবং পরাশক্তির প্রতি ক্ষোভ থেকেই এই গানের জন্ম। পিঙ্ক ফ্লয়েড ফ্রন্টম্যান ডেভিড গিলমোরের কথায় এই গান ‘শান্তির আহ্বান’-ও বটে।
২০০৮ সালে পিঙ্ক ফ্লয়েডের কিইবোর্ড-বাদক রিচ রাইটের মৃত্যুর পরই, ভেঙে যায় পিঙ্ক ফ্লয়েড। আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন গান প্রকাশ এবং মঞ্চ প্রদর্শনী— উভয় ক্ষেত্র থেকেই সরে দাঁড়িয়েছিল কিংবদন্তি সাইকিডেলিক রক ব্যান্ডটি। তার প্রায় দেড় দশক পরে এই প্রত্যাবর্তনে স্বাভাবিকভাবেই বদলেছে পিঙ্ক ফ্লয়েডের লাইন-আপও। ডেভিড গিলমোর, নিক ম্যাসন, বেসবাদক গাই প্র্যাটের সঙ্গে কিই-বোর্ড বাজিয়েছেন নিতিন সাহনি। তবে সদ্য-প্রকাশিত গানটির কেন্দ্রে রয়েছেন ইউক্রেনিয়ান শিল্পী তথা গায়ক আন্দ্রেই খিলভনিউক। তিনিই কণ্ঠ দিয়েছেন এই গানে। এমনকি এই গানের জন্মও তাঁর থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই।
সপ্তাহ ছয়েক আগের কথা। তখন সদ্য ইউক্রেনের বুকে আঘাত শানিয়েছে রাশিয়া। সেসময় ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন ইউক্রেনিয়ান শিল্পী। অস্ত্রসজ্জিত হয়ে তাঁকে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল ইউক্রেনিয়ান সেনাবাহিনীতে। সেইসঙ্গে মিনিট খানেকের ভিডিওতে তিনি গেয়েছিলেন ‘দ্য রেড ভাইবারনাম ইন দ্য মিডো’ গানটি। উল্লেখ্য, এই গানটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই বেশ জনপ্রিয় সোভিয়েত মুলুকে। রুশ-ইউক্রেন সংঘাতের সময়ও এই গানকেই ব্যাপকভাবে প্রতিবাদের হাতিয়ার করে নিয়েছিলেন ইউক্রেনিয়রা।
আরও পড়ুন
অর্থসংকটে পিঙ্ক ফ্লয়েড, ব্যান্ডের ওয়ার্ল্ড ট্যুরের জন্য প্রিয় ফেরারি বেচলেন ম্যাসন
যাক সে কথা। তবে খিলভনিউকের গাওয়া এই গানই নতুন গান তৈরির জন্য অনুপ্রাণিত করে গিলমোরকে। ব্যক্তিগতভাবে গিলমোর যোগাযোগের চেষ্টা করেন খিলভনিউকের সঙ্গে। তখন যুদ্ধে আহত হয়ে তিনি ভর্তি হাসপাতালে। তবে গিলমোরকে ফেরাননি তিনি। বরং, অসুস্থ শরীরেই শুরু হয়েছিল নতুন গান রেকর্ডের প্রস্তুতি।
আরও পড়ুন
২০১৫-তে ভেঙে গিয়েছিল ব্যান্ড, লকডাউনে আবার ‘ফিরল’ পিঙ্ক ফ্লয়েড
গানটিতে শুধু রুশ আগ্রাসন, ইউক্রেনিয়ানদের অসহায়তা, শান্তির বার্তা ছাড়াও বিশ্বের বৃহত্তর শক্তিগুলি বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলির নিষ্ক্রিয়তাকেও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে কিংবদন্তি ব্যান্ডটি। গানটির অ্যালবাম কভারেও ঝলমল করছে ইউক্রেনের জাতীয় ফুল সূর্যমুখীর ছবি। গানটির সৌজন্যে প্রাপ্ত সমস্ত অনুদান এবং লভ্যাংশ ইউক্রেন শরণার্থীদের ত্রাণের জন্য ব্যবহৃত হবে বলেই জানিয়েছে পিঙ্ক ফ্লয়েড। এর আগেও গিলমোর তথা পিঙ্ক ফ্লয়েডের একাধিক মানবিক উদ্যোগ নজর কেড়েছিল গোটা বিশ্বের। এবারেও অন্যথা হল না তার। সৎ উদ্দেশে অবসর ভেঙে বেরিয়ে এসে পিঙ্ক ফ্লয়েড যেন প্রমাণ করল ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’…
আরও পড়ুন
আমার ছবিকে প্রভাবিত করেছে পিঙ্ক ফ্লয়েড, বিটলস, রবীন্দ্রনাথের গান
Powered by Froala Editor