কথায় আছে সময় কারোর জন্য অপেক্ষা করে না। নিজের মতোই বয়ে চলে একদিকে। তবে সত্যিই কি এই প্রবাহ সরলরৈখিক? ভবিষ্যতের দিকে এই প্রবাহকে পাল্টে দিয়ে কি পাল্টে ফেলা যায় তাকে? স্বাভাবিক নিয়মেই ঘুরে ফিরে আসে এই প্রশ্ন। তবে পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব অন্য কথাই বলে। জানায়, বর্তমান, অতীত এবং ভবিষ্যতের মধ্যে আলাদা করার মতো কিছুই নেই। সবটাই ইতিপূর্বে ঘটে গেছে কোনো এক পদার্থবিদ্যার ফ্রেমে। নিজে চাইলেও তাকে বদলে ফেলা যাবে না কোনোভাবেই।
সময়ের এই রৈখিক প্রবাহের তত্ত্ব বহু বছর আগে সামনে এনেছিলেন নিউটন। ‘পরম সময়’ সংজ্ঞায়িত করে দেখিয়েছিলেন অতীত আর ভবিষ্যৎ একই সরলরেখার দুটি পৃথক অংশ। দুটির মধ্যবর্তী কোনো বিন্দুতে অবস্থানরত বর্তমান। তবে কয়েক শতাব্দী বাদে এই তত্ত্বকেই খানিকটা বদলে ফেললেন আইনস্টাইন। জানালেন সময়ের পৃথকভাবে কোনো অস্তিত্ব নেই, যতক্ষণ না তার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে কোনো স্থানের স্থানাঙ্ক। স্থান ও সময়ের সমাহারে একটি চার মাত্রার ব্লকের মধ্যেই রয়েছে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ। এবং আমরা পর্যবেক্ষক। শুধুমাত্র ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির অনুসরণ করে চলেছি আমরা। বরং সবটাই ঘটে গেছে ইতিপূর্বেই।
এখন ধরা যাক, আজ সকাল দশটায় আপনার যাওয়ার কথা রয়েছে অফিসে। অর্থাৎ, আপনার কাছে সেটাই ভবিষ্যৎ। এখন উল্লেখিত সময়ের মিনিট পাঁচেক আগে যদি নিজের গন্তব্য বদলে ফেলেন। তবে তা তো এড়িয়ে যাওয়া হল ভবিষ্যৎকে? এমন প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। তবে আইনস্টাইনের তত্ত্ব বলছে এমনটাই ঘটার ছিল ইতিপূর্বেই। অর্থাৎ, নিয়তিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার এই পরিকল্পনা এবং কার্যকলাপও নিয়তিতে পূর্বলিখিত ছিল।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদই সন্ধান দেয় টাইম ট্রাভেলের। তবে সেখান থেকে অবিভক্ত এই ভবিষ্যতের কথা আসছে কীভাবে? কল্পবিজ্ঞানের সিনেমা বা গল্পও তো এই তত্ত্বের ওপর নির্ভর করেই দেখায় বিকল্প ভবিষ্যৎকে! প্রকৃতপক্ষে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাহায্য নিয়েও ভবিষ্যৎ-দর্শনের কথা বলা হলেও এড়িয়ে যাওয়া হয় অন্য একটি প্রসঙ্গে। তা হল ‘লস অব সাইমাল্টিনিটি’। অর্থাৎ, বাতিল হতে থেকে সামঞ্জস্যতার সম্ভাবনা। কেমন বিষয়টা?
ধরা যাক, একটি ট্রেনের প্রথম ও শেষ কামরায় রয়েছেন দুই যাত্রী। দু’জনের হাতের ঘড়ির মধ্যেই সামঞ্জস্য রাখা হল যাত্রা শুরুর আগে। এবার ট্রেনটি যদি আলোর তুল্য গতিবেগে ছুটতে থাকে তবে দু’জনের ঘড়ির সময়ের পাঠ দেবে ভিন্ন মান। অথচ, দু’জনেরই গতিবেগ এক। ফলে আপেক্ষিকতা অনুযায়ী ঘড়ির পাঠও সমান হওয়ার প্রয়োজন উভয়ের।
আসলে এই অসামঞ্জস্যের জন্য এক্ষেত্রে দায়ী দু’জনের মাঝের দূরত্ব। স্থানাঙ্ক আলাদা হওয়ার দরুণ, একজন একই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন খানিকটা আগে, অন্যজন পরে। তবে দু’জনের ক্ষেত্রেই যা এক, তা হল গতিবেগের দৌলতে সময় পরিবর্তনের হার অত্যন্ত দ্রুত হচ্ছে স্বাভাবিকের থেকে। তাঁদের গতিবেগ যত বাড়তে থাকবে, যত নিকটবর্তী হতে থাকবে আলোর গতিবেগের কাছাকাছি ততই দ্রুত প্রবাহিত হবে সময়। এ বিষয়ে আপত্তি নেই কারোরই।
আরও পড়ুন
ব্ল্যাক হোলের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে এই ধাতুর, যুগান্তকারী আবিষ্কার পদার্থবিজ্ঞানের জগতে
এখন কল্পনা করা যাক আলোর কণা ফোটনের কথা। ফোটনের গতিবেগ আলোর সমান হওয়ায় ফোটনের নিরিখে সময় প্রবাহের হার হওয়ার কথা অসীম। অর্থাৎ ভবিষ্যতের দিকে একটি ফোটন এগিয়ে চলেছে অসীম গতিতে। সেই ফ্রেম থেকে ইতিপূর্বেই পর্যবেক্ষিত হয়েছে ভবিতব্য। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ, সূর্যের মৃত্যু, গোটা মহাবিশ্ব ধ্বংস সবটাই পর্যবেক্ষণ করেছে ফোটন। অন্যদিকে আমাদের গতিবেগ ধীর বলেই, আমরা সেগুলি পর্যবেক্ষণ করছি অনেক পরে।
কাজেই ভবিতব্যকে পরিবর্তন করা সম্ভব, এমন তত্ত্ব সম্পূর্ণরূপেই অযৌক্তিক। তবে এর পাশাপাশি কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা অনুসারে সমস্তরকম ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া চলে না। কিন্তু সেই ঘটনা ঘটছে অন্যকোনো সমান্তরাল মহাবিশ্বে। যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, তাত্ত্বিকভাবে সেই সমান্তরাল সম্ভাবনায় ঢুকে পড়া গেছে কোনোভাবে— তাহলেও তা আমাদের সময়-ফ্রেমে পূর্ব-নির্ধারিত ছিল বলেই মনে করতে হবে...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অভিনেতা! পদার্থবিজ্ঞানী নন? সুশান্তের পেশা শুনে অবাক হয়েছিলেন কেমব্রিজের গবেষক