ভিলাই স্টিল প্ল্যান্ট থেকে কাজ সেরে সপ্তাহান্তে বাড়ি ফিরছিলেন লক্ষ্মীকান্ত শিরকে। কিন্তু ট্রেনের পা-দানিতে পা রাখতেই ঘটে গেল দুর্ঘটনা। আচমকা ট্রেন ছেড়ে দিতেই পিছলে পড়লেন তিনি। হাত-পায়ের উপর দিয়েই চলে গেল ট্রেনের চাকা। শেষ পর্যন্ত প্রাণে বেঁচে গেলেও বাঁ পা আর ডান হাতটা বাঁচানো যায়নি। এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই ১০ বছর কাটিয়ে দিলেন শিরকে। তবে এখানেই শেষ নয়। দুর্ঘটনার পর দমে না গিয়ে নতুন উদ্যোমে শুরু করলেন জীবন। আর অদম্য অধ্যবসায়ে শেষ পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করে ফেললেন ছত্তিশগড়ের এই প্রাক্তন সেনাকর্মী।
১৯৯৬ সালে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিয়েছিলেন লক্ষ্মীকান্ত শিরকে। তারপর থেকে কাজ করেছেন ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টেই। এর মধ্যেই ২০১১ সালে ঘটে গেল দুর্ঘটনা। কিন্তু জীবনের শুরুতে যিনি সৈনিক ছিলেন, তিনি কি এত সহজে হার মেনে নিতে পারেন? হাঁটাচলার ক্ষমতা হারালেও ঘরবন্দি হয়ে থাকবেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত কিনে ফেললেন একটি অটোমেটিক ট্রান্সমিশন যুক্ত গাড়ি। আবারও যোগ দিলেন কর্মক্ষেত্রে। তবে এতদিন যেভাবে টেকনিশয়ানের কাজ করেছেন, তা আর পারলেন না। বদলে কোম্পানির লাইব্রেরিতে কাজে যোগ দিলেন। শিরকের এই উদ্যমের সঙ্গে সমানে সঙ্গত করে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে।
লাইব্রেরিতে কাজ করতে করতেই বই পড়ার নেশা বাড়তে থাকে শিরকের। বিশেষ করে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও বিশ্বজয় করেছেন যাঁরা, তাঁদের জীবনের কাহিনি বেশি করে আকৃষ্ট করত তাঁকে। এভাবেই তিনি জানতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার জেভিয়ার স্টিফেনের কথা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও যিনি ২৫ হাজার কিলোমিটার গাড়ি চালানোর রেকর্ড তৈরি করেছিলেন। সেটা ২০১৬ সাল। অবশ্য সেই রেকর্ডকে অনেক পিছনে ফেলে দিলেন লক্ষ্মীকান্ত শিরকে। তিনি গাড়ি চালিয়েছেন ১ লক্ষ ২৬ হাজার কিলোমিটার। একটানা গাড়ি চালিয়ে কন্যাকুমারী থেকে পৌঁছে গিয়েছেন দেরাদুন অবধি। শেষ পর্যন্ত তার স্বীকৃতিও পেলেন। সম্প্রতি লিমকা বুক অফ রেকর্ডস এবং গোল্ডেন বুক অফ রেকর্ডসে নাম উঠল তাঁর। এই বিশ্বরেকর্ড তৈরির পাশাপাশি রাইপুর শহরে ৫টি কার র্যালিতেও যোগ দিয়েছেন তিনি। এমন উদ্যম থেকেই তো জিনিয়াসের জন্ম হয়।
Powered by Froala Editor