শুটিংয়ে সত্যজিৎ রায়ের চোখ সর্বক্ষণ থাকত ক্যামেরার দিকে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিচ্ছেন সমস্তটা। কিন্তু আরও একটি ক্যামেরা সেই সময় এই পুরো ব্যাপারটা লেন্সবন্দী করে নিচ্ছে। এখানে সত্যজিৎ নেই; আছেন নিমাই। নিমাই ঘোষ। বাংলা তথা ভারতের অন্যতম প্রথিতযশা ফটোগ্রাফার। গোটা পৃথিবী তাঁকে চেনে সত্যজিতের ক্যামেরা হিসেবে। সেই নিমাই ঘোষ বুধবার প্রয়াত হলেন। নিজের বাসভবনেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন
দৃষ্টিহীন বিনোদবিহারীকে নিয়ে তথ্যচিত্র বানালেন সত্যজিৎ, ক্যামেরার পিছনে সৌমেন্দু রায়
‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর কাজ চলছে। সত্যজিৎ নিজের কাজে মগ্ন। তবে ইতিমধ্যেই দেখেছেন, কোণে এক তরুণ ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ছবি তুলছে। পরে তাঁরই তলা ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে যান কিংবদন্তি পরিচালক। ‘আরে, তুমি তো আমার অ্যাঙ্গেল মেরে দিয়েছো!” এইভাবেই নিমাই ঘোষ জুড়ে যান সত্যজিতের সঙ্গে। অথচ ফটোগ্রাফি করবেন, এটা ভাবেননি কখনও। নিজেই মজার ছলে বলতেন, “মানিকদাই তো জীবনটা শেষ করে দিল!”
আরও পড়ুন
প্রয়াত অভিনেতা সন্তু মুখোপাধ্যায়, শোকের ছায়া বাংলা সিনে দুনিয়ায়
তাঁর চোখ একের পর এক শুটিংয়ের দৃশ্য ধরেছে। ধরেছে প্রেক্ষাপট; ধরেছে সত্যজিৎকে। কেবলই তিনি? মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। পেয়েছেন পদ্মশ্রী। জাতীয় পুরস্কারের স্পেশ্যাল জুরি মেম্বারও ছিলেন। তবে জীবনে ছবিই শুধু তোলেননি। নাটকও করেছেন চুটিয়ে। অভিনয় ভালোবাসতেন খুবই। উৎপল দত্তের লিটল থিয়েটার গ্রুপেও অভিনয় করেছেন একসময়। করেছেন শেক্সপিয়র। তবে সেই সব পরিচয়ের একেবারে ওপরে উঠে এসেছে তাঁর ক্যামেরা। যে ক্যামেরা কথা বলত। নিজেই হয়ে উঠত একটি আস্ত দৃশ্য। দুই দশক ধরে সত্যজিতের সঙ্গে কাজ করেছেন। সেই সব ইতিহাসে আজ দাঁড়ি পড়ল। শেষ হল একটি বর্ণময় ইতিহাসের। এই ঘন দুর্যোগের মধ্যে নিমাই ঘোষ আশ্রয় নিলেন তাঁর প্রিয় ‘মানিকদা’র কাছে।