এক বিরাট মাপের আয়োজন। যেন চুম্বকের সামনে গিয়ে উলটে দেওয়া লোহার বস্তা। দেশ জুড়ে এর টান। শীতের দিনে ছুটে আসা লক্ষাধিক মানুষ। তারা জানে, তারা মানে, কোনো এক প্রাপ্তি তাদের অপেক্ষায়। এ এক এমন উৎসব, যেন আলোর দিকে পিলপিল করে ছুটে যাচ্ছে পোকার দল। যেন মৃত্যুই জীবনের একমাত্র নিশ্চয়তা ভেবে তাড়াতাড়ি সেরে ফেলা মনের বাসনা।
এখানে প্রকৃতি এসে মেলে মানুষের চাহিদায়। কয়েক লক্ষ্য ইচ্ছায় এসে ছলাৎ লাগে ঢেউ। সারাবছরের ঘাম, চিন্তা, হতাশা রেখে যাওয়া। পরিযায়ী পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে আসা অন্য এক রাজ্যে, অন্য এক শহরে। মানুষের উচ্চাশার পাশে সন্ন্যাসের ঔদাসীন্য।
সমাজের এই মেলবন্ধন, এই জুড়ে জুড়ে থাকার মাঝে এক একটি মানুষ তার জীবন, তার উপন্যাস নিয়ে পদচিহ্ন ফেলতে আসে মেলায়। অস্থায়ী আয়োজন থেকে ভেসে আসে সাবধানবাণী। মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, বেঁচে থাকাই একমাত্র সম্বল আমাদের।
সবমিলিয়ে হাজার দশেক পুলিশের পাহারা, হাজার বারো অস্থায়ী শৌচাগার, প্রচুর টেলিফোন আর মানুষের উচ্ছ্বাস মিলে সূচনা এই উৎসবের। তারপর সাগরকে ফেলে নিজের সংসারে ফিরে যাওয়া। ধোঁয়া আর শিবের অনুনাদে গর্জে ওঠা সাধুদের অগোছালো উদাসীনতা।
ইতিমধ্যে শহরে এসে পড়েছেন তাঁরা। বাবুঘাটে আসর পেতেছেন। গঙ্গাস্পর্শে জানান ভেসেছে গোটা ভারত। আপাতত কলকাতার বুকে একটা গোটা দেশ বাসা বেঁধেছে। গঙ্গার পাড়ে এই লাগামছাড়া গাম্ভীর্য মনে করিয়ে দিচ্ছে বেনারসের পরিবেশ। এরপর পাড়ি দেবেন গঙ্গাসাগরে। কী অপার্থিব পুণ্য অপেক্ষায় রয়েছে, জানেন তাঁরাই। আর জানে তাঁদের প্রাণশক্তি, যা বছরের পর বছরে তাঁদের টেনে আনে এখানে। এর বিরাম নেই কোনো...