আলোক দূষণের শিকার উদ্ভিদরা, কৃত্রিম আলোর কারণে বদল গাছের দৈহিক ঘড়ির!

ঘুমের মধ্যে চোখের উপর আলো পড়লে, যে-কারোরই অস্বস্তি হয়। আর গাছেদের? হ্যাঁ, তাদের ক্ষেত্রেও বিষয়টা একইরকমের। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আনল গবেষণা। সারারাত কৃত্রিম আলোর (Artificial Light) দাপাদাপিতে রীতিমতো বিপর্যস্ত গাছেরা। প্রভাবিত হচ্ছে তাদের জৈবিক চক্র (Phenology)।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (Iowa University) অধ্যাপক ইউয়ু ঝু নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই গবেষণায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শহরাঞ্চলে অবস্থিত ৩০০০টি বৃক্ষ এবং অসংখ্য গুল্মের ওপর চালানো হয়েছিল একটি বিশেষ সমীক্ষা। বিগত পাঁচ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে কৃত্রিম আলোর উপস্থিতিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় গাছগুলি। 

সাধারণত বসন্তের সময় গাছের পাতার রং বদলায়। অধিকাংশ পাতাই ঝরিয়ে ফেলে গাছ। জন্ম নেয় নতুন পাতা। এই সময় বহু গাছে মরশুমি ফুলও ফোটে। সমীক্ষায় উঠে আসে, বসন্তে প্রান্তিক এবং তুলনামূলকভাবে কম আলোকিত অঞ্চলের তুলনায় শহুরে গাছেরা কমপক্ষে ৯ দিন আগে পাতা ঝরিয়ে গেলে। তাদের ফুলের স্থায়িত্বও গড়ে ৬ দিন কম। 

হ্যাঁ, এমনটাই বলছে সমীক্ষালব্ধ ফলাফল। মূলত দিনের আলোর উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে গাছ। এই খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়াই দিন-রাত্রির চক্রকে বুঝতে সাহায্য করে গাছকে। পাশাপাশি এই দৈহিক প্রক্রিয়াই ঋতুপরিবর্তন এবং তাপমাত্রার সম্পর্কে অনুমান দেয় গাছকে। তবে সূর্যের আলো নিভে যাওয়ার পরেও কৃত্রিম আলোর দৌরাত্ম্য প্রভাবিত করছে তাদের ফিনোলজি। বদলাচ্ছে গাছের দৈহিক ঘড়িকে। তবে পাতার রং পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শুধু আলোই নয়, কার্বন ডাই অক্সাইড, মাটির আর্দ্রতা ও অন্যান্য নানান বিষয়ের ওপরেও নির্ভরশীল। 

আরও পড়ুন
গাছ কাটার সমীক্ষায় বাধা, ঠুরগা শক্তি-প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনই ভরসা অযোধ্যাবাসীর

তবে উপায়? শহর থেকে তবে প্রকাণ্ড বৃক্ষদের কি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত অন্যত্র? নাকি রাতের বেলায় নিভিয়ে রাখা উচিত শহরের সমস্ত আলো? গবেষকদের অভিমত, গাছ সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র রোপণ করার প্রশ্নই আসে না। বরং, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে আরও বেশি করে বৃক্ষরোপণ করা উচিত শহরাঞ্চলে। তবে রাতের বেলায় আলোর ব্যবহার ন্যূনতম করলে যেমন গাছের সুবিধা হবে, তেমনই বাঁচবে শক্তিও। নিয়ন্ত্রণে আসবে আলোকদূষণ। তা সম্ভব না হলে, শহরের সমস্ত আলোর ক্ষেত্রেই ল্যাম্পশেড ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা। সেক্ষেত্রে গুল্মদের খুব একটা সুবিধা না হলেও, খানিকটা রেহাই পাবে মহীরুহরা… 

আরও পড়ুন
রিমোটেই নিয়ন্ত্রিত হবে মাংসাশী গাছ! অবাক আবিষ্কার সুইডিস গবেষকের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
তৈরি হবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, হিমাচলে কাটা পড়তে চলেছে অসংখ্য বিরল পাইন গাছ