শারীরিক যন্ত্রণা এখন তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী। বিগত কয়েক মাসে ওজন কমেছে প্রায় ৩০ কেজি। খুব বেশি সময় নেই হাতে, সেটা নিজেও জানেন কোলাইটিসে আক্রান্ত ৬৮ বছর বয়সী পেত্রা ওয়েনহাম (Petra Wenham)। কিন্তু শারীরিক যন্ত্রণাকেও কখনও কখনও ছাপিয়ে যায় মানসিক যন্ত্রণা, আত্মপ্রকাশ না করতে পারের অনুভূতি। তবে অনুশোচনা নিয়ে পৃথিবী ছাড়তে চাননি পেত্রা। তাই জীবনসায়াহ্নে এসে তিনি সদর্পে প্রকাশ্যে আনলেন নিজের রূপান্তরকামী সত্তাকে।
যুক্তরাজ্যের সাফোল্কের অবসরপ্রাপ্ত সাইবারসিকিওরিটি কনসাল্টেন্ট পেত্রা ছোটো থেকেই বুঝেছিলেন তিনি আর পাঁচটা ছেলের মতো নয়। তবুও স্কুলের পরিবেশ ও সমাজ পুরুষ-মহিলার বিভাজনকেই একমাত্র স্বাভাবিক বলে ঢুকিয়ে দিয়েছিল তাঁর মস্তিষ্কে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ ক্রস-ড্রেসিং-এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন পেত্রা। কিন্তু তারপরেও তিনি জানতেন না, প্রথাগত পুরুষ-নারীর ছকের বাইরেও ভিন্ন লিঙ্গপরিচিতি হতে পারে। বা, বলা ভালো সমাজের পরিকাঠামোই তা জানতে দেয়নি তাঁকে। কলেজ-জীবনে এক মহিলার সঙ্গে প্রেম, তারপর বিবাহ। জন্ম দিয়েছেন দুই সন্তানেরও।
কিন্তু প্রথাগত এই জীবনযাপন মানেই তাঁর ব্যক্তিত্ব, আত্মপরিচয়টা তো মিথ্যে হয়ে যেতে পারে না। দেরি হলেও তা বুঝেছিলেন পেত্রা। ততদিনে ৪০ বছর দাম্পত্য জীবন কাটিয়ে ফেলেছেন তিনি। ২০১৫ সালে অন্ত্রে অস্ত্রোপচার হওয়ার পর স্ত্রী লরেনের কাছে সমস্ত কথাই খুলে জানান পেত্রা। কঠিন এই বাস্তবের কথা শুনে লরেনের ঠিক কী প্রতিক্রিয়া হবে, তা নিয়েই চিন্তিত ছিলেন তিনি। তবে পেত্রাকে অবাক করে দিয়েই তাঁর পাশে দাঁড়ান জীবনসঙ্গিনী।
আরও পড়ুন
অর্ধনারীশ্বর-আরাধনা ও রূপান্তরকামী-বৃহন্নলাদের শারদীয়া
তবে ওইটুকুই। লরেন ছাড়া আর কারোর কাছেই নিজের পরিচয় প্রকাশ্যে আনেননি ওয়েনহাম। আর তার অন্যতম কারণ ছিল, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু কতদিন আর লুকিয়ে রাখা যায় নিজের অনুভূতিগুলোকে? শেষ পর্যন্ত মৃত্যুচেতনাই তাঁকে তাড়িত করল আত্মপ্রকাশে। গত জুন মাস তথা প্রাইড মান্থেই রামধনু পতাকা উড়িয়ে মুক্তির স্বাদ খুঁজেছিলেন পেত্রা। প্রকাশ্যে এনেছিলেন নিজের আসল লিঙ্গপরিচয়।
আরও পড়ুন
পরিচয় লুকিয়েই বিবাহ করতেন রূপান্তরকামীরা, ইউরোপের ‘ফিমেল হাসবেন্ড’দের গল্প
পেত্রার এই আত্মপ্রকাশে যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে তাঁর বাঁচার খিদেও। জুলাই মাসে উইমেন ইনস্টিটিউট পত্রিকায় প্রথম রূপান্তরকামী মহিলা হিসাবে প্রকাশিত হয় তাঁর সাক্ষাৎকার এবং জীবনেও গল্প। সেখানেই থেমে থাকেননি পেত্রা। বরং, সাধারণ মানুষকে সচেতন ও ‘শিক্ষিত’ করে তোলাই এখন তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। শেষ বয়সে এসে পেত্রা পর্দা সরিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। কিন্তু যাঁরা পারেননি, তাঁদের জন্যই এখন লড়াই চালাচ্ছেন ওয়েনহাম। প্রচার করছেন সমকামিতা, রূপান্তরকামিতার মতো বিষয়গুলির সম্পর্কে। এভাবেই সাতরঙা পতাকা উড়ুক সমাজের বুকে। ভেঙে যাক সমস্ত বেড়াজাল…
আরও পড়ুন
অপমান-লাঞ্ছনা পেরিয়ে দেশের প্রথম রূপান্তরকামী টেনিস কোচ নিশিকা
Powered by Froala Editor