১৪ বছরের নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগে অভিযুক্ত যুবক। পসকো আইন অনুযায়ী বিশেষ আদালতে শুরু হয়েছে বিচারপ্রক্রিয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিচারপতি এসসি যাদবের বেঞ্চ আসামীর জামিন মঞ্জুর করল। অথচ আসামী নিজে অভিযোগ স্বীকার করেই নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর অপরাধের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছেন একটি মানসিক অসুস্থতাকে। আসামীর আইনজীবী দাবি করেছেন, তিনি পিটার প্যান সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। অথচ এর সপক্ষে প্রয়োজনীয় ডাক্তারি নথিপত্র কিছুই দেখাতে পারেননি। কিন্তু এই পিটার প্যান সিন্ড্রোম কী, বা তার সঙ্গে এই ধরণের অপরাধের সম্পর্কই বা কী?
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী যে মানুষ বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে ওঠা দায়দায়িত্বের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন না, তিনিই পিটার প্যান সিন্ড্রোম আক্রান্ত। ১৯৮৩ সালে ডাঃ ড্যান কাইলে প্রথম এই রোগের কথা বলেন। কিন্তু মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, “পিটার প্যান সিন্ড্রোম ডায়াগনস্টিক স্ট্যাটিসটিক্যাল ম্যানুয়ালের অন্তর্ভুক্ত কোনো রোগ নয়।” তাঁর কথায়, “আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন মানসিক রোগের নাম খুব লঘু করে অনেক সময় মানুষ তাঁর দৈনন্দিন কথাবার্তায় প্রয়োগ করেন। এর ফলে বহু ক্ষেত্রে নিজের কৃতকর্মের দায় আর নিজের উপর বর্তায় না। এটি রোগের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া যায়।” এই বিশেষ ঘটনাটিকে ঘিরে তাই হতাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী রত্নাবলী রায়ের কথায়, “মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে অপরাধপ্রবণতাকে জড়িয়ে ভাবার একটা প্রবণতা সবসময়ই দেখা যায়। এক্ষেত্রেও তেমনটাই দেখা গেল। এই ধরণের বিচারপ্রক্রিয়া আসলে সেইসমস্ত মানুষদের সঙ্গে অবিচার করে, যাঁরা মানসিক জটিলতার কারণে সমাজ থেকে আলাদা। মানুষ যাঁদের সবসময় এড়িয়ে চলে।”
২৫ হাজার টাকার জামিনমূল্যের বিনিময়ে ছাড়া পেয়েছেন অভিযুক্ত। সেইসঙ্গে সামান্য কিছু নিয়ম লাগু আছে। অথচ যৌন নিগ্রহের বিচার কি আদৌ হবে? অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “আমার এটা ভাবতে খুব আশাহত লাগছে যে এর দ্বারা আইনি প্রক্রিয়াও প্রভাবিত হতে শুরু করেছে। অপরাধী যদি মানসিক স্বাস্থ্যকে আলগা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে, তাহলে অপরাধেরও সুবিচার হয় না এবং মানসিক রোগের সঙ্গেও অবিচার করা হয়।” অন্যদিকে রত্নাবলী রায়ের কথাতেও উঠে এল একই বক্তব্য। তাঁর মতে, “সমাজের পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা থেকেই এমন ধরণের আশ্রয় খুঁজছেন অনেকে। কিন্তু আমাদের এখানে বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে অপরাধপ্রবণতার কোনো সম্পর্ক নেই। মানসিক অসুস্থতার শিকার মানুষরা ভয়ানক হিংস্র, এমন ধারণা আদৌ ঠিক নয়। আদালতের এই রায়ের পর সেই কাজটাই অনেকটা কঠিন হয়ে গেল।”
একের পর এক বিতর্কিত রায়ের কারণে গত তিনমাসে বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে মুম্বাই হাইকোর্ট। এক্ষেত্রেও বিচারপতি এসসি যাদবের বেঞ্চ সেই একই নজির সৃষ্টি করল। পিতৃতন্ত্র এবং সমাজের একরৈখিক চলনের মানসিকতা থেকে যে আদালতও মুক্ত নয়, সাম্প্রতিক নানা বিতর্কে সেই কথাটাই উঠে আসছে বারবার।
আরও পড়ুন
প্রকাশ্য সভায় মনোবিদকে খুন, সমকামী সিলভারস্টাইনের ‘প্রতিবাদে’ হতবাক শ্রোতারা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মনোবিদের চরিত্রে অভিনয় থেকে আত্মহত্যা - অলক্ষেই 'গল্প' বুনলেন আসিফ বাসরা?