অরণ্যের উপর দিয়ে ছুটে গেল হেলিকপ্টার। আর তার থেকে ঝরে পড়ল কয়েকটা প্যাকেট। বোমা-গুলি নয়। আবার রাশি রাশি চকোলেট-টফিও নয়। অরণ্যের বুক চিরে নেমে এল কয়েকটা কীটনাশকের প্যাকেট। তারপর মাটিতে পড়তেই প্যাকেট ফেটে সেই কীটনাশক ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। ব্রাজিলের আমাজন অরণ্যে ঘটছে এমনই ঘটনা। সম্প্রতি সেই তথ্য সামনে এনেছেন ব্রাজিলের পরিবেশ সংস্থা আইবিএএমএ-র সদস্যরা। কিন্তু কেন জঙ্গলের মধ্যে এভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কীটনাশক? পরিবেশকর্মীদের দাবি, জঙ্গলের গাছেদের বাঁচাতে নয়, বরং তাদের মেরে ফেলতেই চলছে এই প্রক্রিয়া। গাছ কাটার বদলে জীবিত গাছকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন অরণ্য মাফিয়ারা।
কীটনাশক বা আগাছানাশক কৃষিক্ষেত্রে পরিমিত ব্যবহার করলে কিছু সুফল পাওয়া যায়। কিন্তু অপরিমিতভাবে অরণ্য অঞ্চলে ছড়িয়ে দিলে শুধুই ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তবে এভাবে এগনোর কিছু সুবিধা রয়েছে। ঠিক যে কারণে অরণ্য মাফিয়ারা বেছে নিয়েছেন এই রাস্তা। কীটনাশক এবং আগাছানাশকের প্রভাবে জঙ্গলের ছোটো গাছরা তাড়াতাড়ি মারা যায়। বড়ো গাছদের প্রথমেই কোনো ক্ষতি হয় না। ফলে স্যাটেলাইটের ছবিতে এই বৃক্ষচ্ছেদন ধরা সম্ভব নয়। ছোটো গাছরা মারা যাওয়ার পর অরণ্যে ঢুকে তাদের কাঠ সংগ্রহ করলেই হয়। বিগত ১০ বছরে আমাজন অরণ্যের আয়তন কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। তবে মোট বৃক্ষচ্ছেদনের পরিমাণটা যে তার চেয়েও অনেকটাই বেশি, সেটাই বলছেন পরিবেশকর্মীরা।
আইবিএএমএ-র সদস্যরা বেশ কিছু জায়গায় গিয়ে কীটনাশক এবং আগাছানাশকের প্যাকেট সংগ্রহ করেছেন। নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে গ্লাইফোসেট বা ২,৪ডি-র মতো ভয়ঙ্কর রাসায়নিক। কখনও কখনও বোমা বাঁধতেও যা কাজে লাগে। ২,৪ডি-এর সামরিক প্রয়োগ ঘটেছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়। যার প্রভাবে আজও সেখানে বহু বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়। অরণ্যের গাছেদের পাশাপাশি জন্তুদের উপরেও পড়ছে এইসব রাসায়নিকের প্রভাব। তাছাড়া আমাজনের অরণ্যে অন্তত ৩৩টি উপজাতি সম্প্রদায়ের বাস। তাঁদের দৈনন্দিন জীবনেও ঢুকে পড়ছে এইসব ভয়ঙ্কর রাসায়নিক।
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, তাঁরা এতদিন সরাসরি বননাশের বিষয়েই তদারকি করেছেন। তাই সেই নজরদারি এড়াতেই নতুন এই পথ খুঁজে নিয়েছেন মাফিয়ারা। শুধু মাফিয়ারাই নয়। বাজার এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে অনেক পশুপালক ব্যক্তি বিপুল পরিমাণে কীটনাশক সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ তাঁরা কৃষিকাজ করেন না। আসলে পশুপালনের জন্য চারণভূমির পরিমাণ বাড়াতে তাঁরা এভাবে অরণ্য ধ্বংস করছেন। এতে সহজে বোঝার উপায় নেই। কতদিন ধরে এই পদ্ধতি চলছে, তাও বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু ইতিমধ্যে অনেকটাই ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এখনই এই সমস্ত প্রক্রিয়া বন্ধ করতে না পারলে আমাজনকে বাঁচানোর আর কোনো রাস্তা নেই, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।
আরও পড়ুন
এক বছরে দাবানলে ১৭ মিলিয়ন প্রাণী মৃত আমাজনে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আমাজন নিধনে জড়িত বহুজাতিক ফ্যাশন ও ডিজাইন সংস্থাগুলিও