জাতীয় উদ্যান গড়ে গোল্ডম্যানজয়ী পেরুর মহিলা

উনিশ শতকের শেষের দিক সেটা। ধীরে ধীরে আমাজনের দখল নিতে শুরু করল বৈদেশিক উদ্যোগপতিরা। লক্ষ্য, প্রাকৃতিক রাবার সংগ্রহ। প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মানুষদেরকেই বাধ্য করা হত সেই কাজে। চলত অকথ্য অত্যাচারও। ঔপনিবেশ শক্তির দাসত্বে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় ১ লক্ষাধিক মানুষ। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল আমাজনের একটা বড়ো অংশও। সময় গড়িয়েছে। বন্ধ হয়েছে দাসপ্রথা। রাজত্ব গুটিয়েছে ঔপনিবেশ শক্তিগুলিও। শুধু বন্ধ হয়নি প্রকৃতির ওপর নির্যাতন। আজও সমানভাবেই চলছে বেআইনি খাদান আর বৃক্ষচ্ছেদন। এই ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বিগত দু’দশক ধরেই কার্যত যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন এই অনৈতিকতার সঙ্গে। লিজ চিকাজে চুরে। পেরুর এই মহিলা পরিবেশকর্মীই এ-বছর পেলেন গোল্ডম্যান পুরস্কারের সম্মাননা।

২০১৮ সালের কথা। আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর ন্যাশনাল পার্কের স্বীকৃতি পেয়েছিল পেরুর আমাজনের একটি অংশ। গড়ে উঠেছিল ইয়াগুয়াস জাতীয় উদ্যান। আর এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৩৮ বছর বয়সী লিজ। বোরা জনগোষ্ঠীর সদস্যা, লিজের বেড়ে ওঠা আমাজনেই। তাই ক্রমশ জঙ্গল নিধনের পরিণতি যে কী হতে পারে— তা সামনে থেকেই প্রত্যক্ষ করেছিলেন তিনি। পবিত্রভূমির এই ধ্বংসসাধন তো আর মুখ বুজে সহ্য করে নেওয়া যায় না। কাজেই বেছে নিয়েছিলেন প্রতিবাদের পথ। 

তবে খুব একটা সহজ ছিল না এই কাজ। তবে ক্রমাগত প্রচারের মাধ্যমেই তিনি সঙ্গবদ্ধ করেন গ্রামবাসীদের। চোরাচালানকারীদের থেকে জঙ্গলকে রপক্ষা করতে ব্যবস্থা করেন প্রহরার। পাশাপাশি সরকারের কাছেও বারংবার দ্বারস্থ হন তিনি। দাবি, আমাজনের এই জঙ্গলের জন্য নিতে হবে সংরক্ষণ কর্মসূচি। কিন্তু কোনোরকম পদক্ষেপই নেয়নি প্রশাসন। তবে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার নজর কেড়েছিল লিজের এই আন্দোলন। এগিয়ে আসেন শিকাগো মিউজিয়াম, ফ্র্যাঙ্কফুট জুওলজিক্যাল সার্ভের পরিবেশবিদরা। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে বৈদেশিক চাপের মুখে পড়েই সিদ্ধান্ত বদলায় সরকার। 

২১ লক্ষ একর জুড়ে ছড়িয়ে থাকে ইয়াগুয়াস জাতীয় উদ্যানে বসবাস করে প্রায় পাঁচশো প্রজাতির পাখি, সাড়ে পাঁচশো প্রজাতির মাছ, বিভিন্ন বিপন্নপ্রায় প্রাণী। রয়েছে ৩ হাজারেরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ। সংরক্ষণ কর্মসূচি না নেওয়া হলে এই জীববৈচিত্রের অধিকাংশটাই মুছে যেত কয়েক বছরের মধ্যে। এমনটাই অভিমত লিজের। সংরক্ষণের পরযে ধীরে ধীরে চেহারা বদলাচ্ছে গোটা অঞ্চলের, স্পষ্ট সেই ছবি। তবে সম্পূর্ণভাবে যে অবৈধ খাদান বন্ধ হয়েছে তেমনটা নয়। এখনও নদী পথে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে চোরাশিকারিরা। তার বিরুদ্ধে যাতে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করে সরকার— সেই দাবিতেই এখনও আন্দোলনের মাঠ ছাড়েননি তিনি। 

আরও পড়ুন
হিরের খনির জন্য ২ লক্ষ বৃক্ষচ্ছেদনের পরিকল্পনা, দেশজুড়ে সরব পরিবেশকর্মীরা

কিছুদিন আগেই নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণা দাবি করেছিল, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অরণ্যাঞ্চলের দায়িত্ব প্রাচীন জনগোষ্ঠীদের হাতে তুলে দিলেই একমাত্র বাঁচবে প্রকৃতি। সেই কথাই যেন খাতায়-কলমে প্রমাণ করে দিলেন পেরুর এই আদিবাসী পরিবেশকর্মী…

আরও পড়ুন
পরিবেশ সংরক্ষণে ৫০০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিউজিল্যান্ডের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ বাঁচাতে স্কুল ধর্মঘটের ডাক ৫০ হাজার পড়ুয়ার