গত সাত দশক জুড়ে প্রযুক্তির জগতে ঘটে গেছে নানা বৈপ্লবিক আবিষ্কার। আর কয়েক বছরের মধ্যেই ঘটে যেতে পারে আরেকটি শিল্পবিপ্লব। সম্ভবনা তো অবশ্যই আছে। শুধু কাঁচামালের অভাব না হলেই হল। কাঁচামালের অভাব? হ্যাঁ, প্রচারের আলোয় না এলেও এই একটি বিষয় চিন্তায় ফেলে দিয়েছে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবকদের। নতুন প্রজন্মের গেজেট চালাতে যে বিশেষ ধরনের ধাতু প্রয়োজন, সেগুলোই আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না প্রকৃতিতে। এখন প্রশ্ন হল, সেইসব মৌল গেল কোথায়? উত্তর অতি সহজ। সেগুলো আছে আমার আপনার ঘরের মধ্যে। অবহেলায় পড়ে আছে। প্রয়োজনমতো ব্যবস্থা নিলেই তাদের পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু সেই প্রচেষ্টাটুকুরই বড্ড অভাব।
আরও পড়ুন
মরচে থেকে তৈরি হাইড্রোজেন, জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্পের হদিশ বিজ্ঞানীদের
বাজারে আসছে নিত্যনতুন গেজেট। প্রতি বছর নিয়ম করে বদলাচ্ছে স্মার্ট ফোন, দুবছর অন্তর ল্যাপটপ। নতুন জিনিস তো ব্যবহার করা হচ্ছে। আর পুরোনোটা পড়ে থাকছে ঘরের এক কোণে। আইন অনুযায়ী কিন্তু প্রতিটা নতুন গেজেট কেনার সঙ্গে সঙ্গে পুরনোটা পুনর্ব্যবহারের জন্য পাঠানোর কথা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার কতটুকুই বা হয়! শুধু আমাদের দেশে নয়, পশ্চিমের উন্নত দেশগুলির অবস্থাও তথৈবচ। ব্রিটেনের ৬ কোটি মানুষের হেফাজতে পড়ে আছে ৪ কোটি পরিত্যক্ত গেজেট। আমাদের ১৩৩ কোটির দেশে সংখ্যাটা নিশ্চই আন্দাজ করা যায়।
আরও পড়ুন
চাঁদই একমাত্র নয়, পৃথিবীর আরও একটি ‘উপগ্রহের’ সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা
এইসব পুরনো গেজেট আসলে কী কাজে লাগবে? বিষয় হল; এলসিডি, এলইডি, মাইক্রোচিপ, মাইক্রোপ্রসেসর ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য ধাতু। এর মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য চারটি ধাতু হল গ্যালিয়াম, ইন্ডিয়াম, হাফনিয়াম এবং সেলেনিয়াম। জিংক অথবা বক্সাইটের সঙ্গে বাইপ্রোডাক্ট হিসাবে পাওয়া যায় এই ধাতুগুলি। ফলে সামান্য পরিমাণে যোগান পেতেই প্রচুর আকরিকের দরকার হয়। অথচ এই ধাতুগুলিকে বাদ দিয়ে আধুনিক ইলেকট্রনিক গেজেট তৈরি সম্ভবই নয়। তাছাড়াও আছে তামা এবং রুপো। ইলেক্ট্রনিক গেজেট তৈরিতে এই দুটি ধাতুও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অথচ প্রকৃতিতে এদের যোগান অফুরন্ত নয়। ভবিষ্যতে এগুলি হারিয়ে গেলে, নতুন করে কি তৈরি করতে হবে চিরচেনা পর্যায় সারণীও? উঠে আসছে এই প্রশ্নও।
আরও পড়ুন
এই প্রথম দুটি পরমাণুর সংযুক্তিকরণ ধরা পড়ল ক্যামেরায়, উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানীরা
আজকের দিনে ইলেকট্রনিক গেজেট ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকাই প্রায় অসম্ভব। ধরুন, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য পাওয়া যাচ্ছে না পেসমেকার। অথবা মুমূর্ষু মানুষের চিকিৎসার জন্য নেই ইসিজির বন্দোবস্ত। এরকম ভবিষ্যত আমরা নিশ্চই দেখতে চাই না। আর এমন পরিস্থিতি এড়াতে চাইলে, ইলেকট্রনিক বর্জ্য পদার্থের পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। আর এই কাজে প্রতিটা দেশের সরকারকে যেমন এগিয়ে আসতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে আমাদেরও।