জলের অভাবে গ্রাম ছাড়ছেন বাসিন্দারা, প্রশাসন নির্বিকার

গোটা ভারতেই বাড়তে চলেছে পানীয় জল নিয়ে সমস্যা। চলতি বছরেই কয়েকটি রাজ্য তীব্র জলকষ্টের মুখোমুখি হয়েছিল। এরই মধ্যে উঠে এল একটি গ্রামের কথা। তামিলনাড়ুর তিরুভাল্লুর ও অন্ধ্রপ্রদেশের সীমান্তে অবস্থিত গোল্লালাকুপ্পাম গ্রাম। প্রায় আড়াইশোর বেশি পরিবারের ঠাঁই সেখানে। সেখানে পানীয় জলের সমস্যা এতটা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও এমনকি ভিন রাজ্যে পর্যন্ত পাড়ি দিচ্ছেন অনেকেই। 

জল সমস্যার উৎস খুঁজতে গিয়ে জানা গেল সেখানকার কিছু ভৌগলিক তাৎপর্য। গোল্লালাকুপ্পাম গ্রামটি  তিনদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা। মুনুগুন্ডু, গাইকুন্ডু ও বোদাপারাই যথাক্রমে উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বদিকে ঠায় দাঁড়িয়ে। বর্ষাকালে, পাহাড়ের সমস্ত জল যখন এই গ্রামের ৩০০ একরের উপর দিয়ে বয়ে যায়, তখন সে এক অপরূপ দৃশ্য। মনে হয় যেন গ্রামের গা বেয়ে বয়ে যাওয়া কোনো নদী। কিন্তু সেই জল পুরোপুরি অন্ধ্রপ্রদেশের নাগারীতে গিয়ে পড়ে। যেহেতু এখানে জল জমে থাকে না, পুরোটাই প্রায় বয়ে চলে যায়, সেহেতু ভূগর্ভস্থ জলও হ্রাস পাচ্ছে দিনের পর দিন। বাসিন্দাদের ক্ষোভ বাড়তে বাড়তে চরমে পৌঁছোয়।

গ্রামের কূপগুলি শুকনো অবস্থায় পড়ে আছে বহুদিন। তার ফলে ফসলের ক্ষতির মাত্রাও বাড়ছে ক্রমশই। গ্রামবাসীদের গ্রাম ছাড়ার অন্যতম কারণ এও। ৮০-র দশকে তাঁরা এই জলকে ধরে রাখতে একটি বাঁধ দিয়েছিলেন, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই জলে তলিয়ে যায় সেটা। একমাত্র চেক বাঁধের মাধ্যমেই এর প্রতিকার সম্ভব বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। এতে তাঁরা একা লাভবান হবেন না, আশেপাশের কেশরাজকুপ্পম, টিটি কান্দিগাই, পুনিয়ামের মতো গ্রামগুলিও উপকৃত হবে।

২০০৩ সালে এখানে পূর্ত বিভাগের আধিকারিকরা পরিদর্শনে এলেও কাজ এখনো বিশ বাঁও জলেই। এই অঞ্চলকে একটি অসাধারণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ভাবা যেতে পারে,একথা বহুবার সরকারের কানে তুললেও গাফিলতির পরিমাণ বাড়ছে। এদিকে দোষ পালটা দোষের রেষারেষিও চলতে থাকে। পূর্ত বিভাগ ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, সেটি নাকি বনদপ্তরের আওতায়। বনদপ্তর জানিয়েছে, এই অঞ্চলের জন্য এক বিশেষ পরিকল্পনা তাদের কাছে জমা পড়েছে, তারা এই গ্রামে কীভাবে কী করা যায় তা জানাবে। বিভিন্ন সরকারি ফাঁসে আটকে গেছে এক অপরূপ সুন্দর গ্রামের স্বাভাবিক জনজীবন। তাও জলের অভাবে। কারও কোনো হেলদোল চোখে পড়ে না।