খিদের জ্বালায় মৃত কুকুরের মাংস খাচ্ছে মানুষ! মর্মান্তিক দৃশ্য রাজস্থানে

দুঃসময় মানেই ভীষণ নিষ্ঠুর। এই মহামারীর সময় তাই এমন নানা দৃশ্য চারিদিকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, অন্যসময় যা কল্পনাও করা যায় না। খিদের তাড়নায় অতিষ্ঠ মানুষ রাস্তার ধার থেকে মৃত কুকুরের মাংস খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে, এমন দৃশ্য শরীরে শিহরণ জাগায়। অথচ সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে এমন ছবির সাক্ষী আজ গোটা দেশ। দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতির বেশিরভাগ বোঝাটাই আজ এসে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষের কাঁধের উপরে। আর তারই মধ্যে অনাহারে, অর্ধাহারে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

ঘটনাটি ঘটেছে রাজস্থানের দিল্লি-জয়পুর হাইওয়ের ধারে। ব্যক্তিগত মোটরগাড়ি থেকে এক দিল্লিগামী যাত্রী হঠাৎ দেখতে পান রাস্তার উপর ঝুঁকে পড়ে একটি মানুষ কিছু করছে। ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে সেদিকে তাকিয়ে তিনি বুঝতে পারেন যে সেই মানুষটি এক মৃত কুকুরের শরীর থেকে মাংস তুলে খাওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রধুমন সিং নারুকা নামের সেই দিল্লিগামী মানুষটি তখন ক্যামেরায় ভিডিও রেকর্ডিং চালু করে এগিয়ে যান সেই মানুষটির কাছে।

কথায় কথায় জানতে পারেন, একটি কারখানার শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। কিন্তু লকডাউনের ফলে গত মার্চ মাস থেকে তাঁর কারখানা বন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই উপার্জনের কোনো রাস্তা নেই তাঁর কাছে। অথচ খিদে তো কোনো শর্ত মানে না। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তার কুকুরের মাংসেই ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণের চেষ্টা করছিলেন তিনি।

প্রধুমন সিং তখন চলে আসার আগে তাঁর গাড়ি থেকে কিছু খাবার বের করে তুলে দেন সেই ক্ষুধার্ত মানুষটির হাতে। সেইসঙ্গে কিছু টাকাও দিতে আসেন, যাতে আগামী কিছুদিন তিনি খাবার কিনে খেতে পারেন। পরে ঘটনার বিবরণ লিখে ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি। আর তারপরেই নেটিজেনদের হাত দিয়ে এই মর্মান্তিক দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে দেশের সমস্ত প্রান্তে।

এই বাধ্যতামূলক লকডাউনের জেরে দেশের দিন আনি দিন খাই মানুষদের অবস্থা কতটা শোচনীয় হয়ে উঠেছে, তার নানা দৃশ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক কালে। বিশেষভাবে সমস্যার মধ্যে পড়েছেন পরিযায়ী ও ঠিকা শ্রমিকরা। কখনও দেখা যাচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকরা দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিচ্ছেন বাড়ির উদ্দেশে, কখনও আবার রাস্তার ধারেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে তাঁদের। অথচ এর মধ্যেও যেন বিভেদ আর অনৈক্যের ছবিটা সম্পূর্ণ মুছে যায়নি। এই বৈপরীত্যের মধ্যে দিয়েই এগিয়ে চলেছে করোনার দিনগুলি। অবশ্য এর মধ্যেও ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছেন অনেকে। আমাদের প্রত্যেকের হাতে হাত রেখেই তো এই কঠিন সময় পেরিয়ে যেতে হবে।